নৈনীতাল ভ্রমণ - ঘোড়া আতংক !
বেশ কয়েক বছর আগের কথা। কয়েক বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত হল শীতে কোথাও বেরিয়ে পরার। আচ্ছা নৈনীতাল হলে কেমন হয়? শুনেছি নৈনী হ্রদটা নাকি দেখার মত। যেই ভাবা সেই কাজ। ৬-৭ জন বন্ধু মিলে বেরিয়ে পরলাম। কলকাতার হাওড়া থেকে ট্রেনে লাকনৌ। ওখান থেকে কাঠগুদাম। লাকনৌ্তে ৭ ঘন্টার মত যাত্রা বিরতি ছিলো। ঐ ফাঁকে শহরটা ঘুরে দেখলাম ঘোড়ার গাড়ি চড়ে। ইয়া বড় বড় সব নবাবদের প্রাসাদ। সব ওয়েল মেইনটেইনড। দেখলাম ‘ভুলভুলাইয়া’। বিশেষত্ব হচ্ছে, প্রাসাদটির যে প্রান্তেই আপনি ঢুকুন, গাইডের হেল্প ছাড়া ঐ প্রাসাদ থেকে আর বের হতে পারবেন না। হয় আপনি এর ছাদে চলে যাবেন, নয়তো ভূ-গর্ভস্থ কোন ফ্লোরে। আমরা চ্যালেঞ্জ নিলাম। গাইডকে বললাম, তুমি আমাদের সাথেই চল কিন্তু কোন কিছু বলবে না। ৩০-৪০ মিনিট নাকানী চুবানী খেয়ে আবার গাইড বেটার স্মরণাপন্ন হলাম। অবাক হলাম এর নির্মাণ চাতুর্যে! গাইড বললো শত্রুরা একবার ঢুকলে যেন আর বেরুতে না পারে তার জন্যেই নাকি এমন স্ট্রাকচার! বোঝ এবার। ঢুকেছো কি মরেছো। যাক লাকনৌ থেকে ট্রেন পাল্টে কাঠগুদাম। ছবির মত একটা স্টেশন। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে।
ওখান থেকে ট্যুরিস্ট বাসে চলে এলাম নৈনীতাল। তখন রাত ৮টা পেরিয়ে গেছে। হোটেল থেকে জানলাম নৈনী হ্রদটা নাকি জাস্ট ওয়াকিং ডি্সট্যান্স। আমাদের আর তর সইলো না। হোটেল ম্যানেজার বললো, টু্রিস্টদের জন্য ৮টার পর বেরুনো নিষেধ । পুলিশ ধরবে । ধুর, কে শোনে কার কথা, আমরা বললাম, কিছুই হবে না। দেখে আসি, চল্। প্রচন্ড ঠান্ডায় বেরিয়ে পরলাম। হ্রদটার কাছে পৌঁছে গেলাম হাঁটতে, হাঁটতেই।
আমাদের সামনে নৈনীহ্রদ। স্তব্ধ হয়ে গেলাম এর স্থির সৌন্দর্যে! এটা একটা প্রাকৃ্তিক হ্রদ – কিডনি শেপড্ অর্থাৎ অনেকটা শীমের বীচির মত। পাহাড়ের পাদদেশে এই হ্রদ। হ্রদটাকে পাহাড় গুলো যেন পাহারা দিয়ে রেখেছে। বিশাল উঁচু সব পাহাড়। পাহাড়ের শরীরে শত-সহস্র পাইন বা এই প্রজাতির গাছ। চারদিকের লাইটে, গাছগুলোর প্রচ্ছায়ায় হ্রদের জলটা অলিভ গ্রিন কালার ধারন করেছে। এত সুন্দর এর আগে মনে হলো দেখিনি কখনো। হঠাৎ কো্ত্থেকে পুলিশ এসে হাজির। হম্বি তম্বি করে হোটেলে ফেরৎ পাঠালো।
পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পরলাম। হ্রদে বোটিং করলাম ইচ্ছেমত। দুপুর নাগাদ মনে হল, এখানকার সবচে উঁচু পাহাড় ‘নৈনী পীক্’ এর চূড়ায় উঠবো। নৈনী পীক্ এর অল্টিটিউড ২,৬১৫ মিটার বা ৮,৫৭৯ ফিট্। পায়ে হেঁটেও ওঠা যায় অথবা এ্যাডভেঞ্চার এর জন্য আপনি ঘোড়ার পিঠেও উঠতে পারেন।
ঘোড়ার পিঠেই নৈনী পীক্ এর চূড়ায় উঠবো সিদ্ধান্ত নিলাম। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে চটপটে এবং করিৎকর্মা মাহবুব (ছদ্ম নাম), ঘোড়া ভাড়া করার দায়িত্ব নিল। আমরা ঢুকে পরলাম একটা মার্কেটে শীতের পোশাক দেখতে। মা’র জন্য একটা মিস্টি গোলাপী রঙের কার্ডিগ্যান দেখতে দেখতেই শুনি ঘোড়ার খুরের শব্দ। দোস্ত মাহবুব সাতটি ঘোড়া নিয়ে হাজির। সাথে সাতটা পিচ্চি; ঘোড়াগুলোকে যারা গাইড করবে।ঘোড়ায় এর আগে চড়িনি। এখন ঘোড়ায় চড়ে পাহাড়ে উঠতে হবে। ভাবতেই অত শীতে গায়ে গরম লেগে গেল। মাহবুবকে সবাই বললাম, দোস্ত একটু রিস্কি হয়ে যাচ্ছে না?! মাহবুব একটা ঘোড়ার ওপর অলরেডী বসে আছে। ওটা ঘোড়া না গাধা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিলো। এ্যাপারেন্টলি মোস্ট উইকেস্ট এন্ড লো হাইটেড এমাং দ্যা সেভেন! ও বললো, অত আঁতলামু মারাবু না; সবাই এ্যাংকাই যাচ্ছে (আঁতলামি করিস না; সবাই এভাবেই যাচ্ছে। বগুড়ার খাস ডায়াল্যাক্ট)। কথা বাড়ালাম না।
বিপদ হোল সবাই বড়সর ঘোড়টাই চাচ্ছে। আর মাহবুবকে ভেংগাচ্ছে - ওই লেডিছ, গাধার উপর বসছিস ক্যান? মাহবুব মুডে সিগারেট টানে আর বলে, সেক্রিফাইস বন্ধু সেক্রিফাইস! সমস্যা হোল অঞ্জন আর নীরবকে নিয়ে (ছদ্ম নাম, সরি)। সবচেয়ে বড় ঘোড়াটাই ওদের চাই। অঞ্জন সিনিয়র হওয়াতে নীরবকে ঝাড়ি টারি মেরে ঠিক করলাম। সবচেয়ে বড়, মোটা-তাজা আর উঁচু ঘোড়ার উপর বসে অঞ্জনের সে কি বিজয়ের হাসি; বললো, বড় গেরে কথা শোনা লাগে বুঝলু (বলা বাহুল্য বাড়ি বগুড়া)। আমরা চলতে শুরু করলাম। আমার ঘোড়াটা মাঝারী সাইজ়ের। তবে মাহবুবেরটা একদম বাপুরাম সাপুরের সাপ। আমাদের ক্যারাভান চলছে। কুল। কোন ঝুট ঝামেলা নেই। হঠাৎ অঞ্জন এর ঘোড়াটা আমার কাছাকাছি চলে এলো। সংগে ভু—স—স করে মুখে একটা সাউন্ড। সাথে তাক্ ধি না ধিন তাক্,- হালকার উপর দুইটা লাফ। অঞ্জনকে বললাম, দোস্ত সাবধান। অঞ্জন বলে এই শালারপুত ঘোড়াটা বড়ই সেয়ান, তুই এইটা নিবু? আমি বললাম না দোস্ত, তোর এত শখের ঘোড়া!
আমরা চলছি। অত সরু ট্র্যাক, তার নীচে আবার আলগা পাথর। ঘোড়া গুলো এত ট্রেইন্ড, একটুও এদিক ওদিক হচ্ছে না। পিচ্চিগুলো ঘোড়াগুলোকে গাইড করছে। কি বলবো, যত উপরে যাচ্ছি শ্বাস নিতে তত কষ্ট হচ্ছে। উপরে তাকালেও মেঘ, নীচে তাকাচ্ছি তাও মেঘ। ঘোড়ার খুর যেখানে পড়ছে তার থেকে ট্র্যাকের কিনারা এক হাত হবে। যাক্, পিচ্চিগুলো আগেই বলেছিলো কোন সমস্যা হলে বলতে হবে ‘পাক্রো’ অর্থাৎ ‘ধর’ বা ‘সামলাও’ । ওরা তখন ঘোড়াগুলোকে সামলে নেবে। আমরা যাচ্ছি, হঠাৎ অঞ্জনের ভয়ার্ত চিৎকার--- প-কা-রো---পাকারো। ঘুরে দেখি ওর ঘোড়াটা লাফাচ্ছে। আর পিচ্চিটা খুব চেষ্টা করছে ঘোড়াটাকে বাগে আনতে। অঞ্জন এর ব্লেজার ততক্ষনে ওর কোলে। দর দর করে ঘামাচ্ছে। টেম্পারেচর বিলো ৮ হবে তখন! এভাবে চূড়ায় ওঠা পর্যন্ত এই প-কা-রো----প-কা-রো---প-কা-রো শুনতে হোল।
চূড়ায় উঠলাম, নৈনীতালের প্যানারমিক ভিউ দেখে মজে গেলাম রীতিমতো। নৈনী হ্রদটা জাস্ট একটা বড় সর বৃক্কের মত দেখাচ্ছে। বিউটিফুল। এদিকে নীরব অঞ্জনকে খেপাচ্ছে। কি মামা, আর নিবা বড়টা? অঞ্জন বলে, আমি হাইটা নামবো তাও ঐটার পিঠে আর না। আমরা সবাই মিলে ওকে অভয় দিলাম। কয়েক ঘন্টা মুগ্ধের মত বসে থেকে রওয়ানা হোলাম আবার।
অঞ্জন এর ঘোড়া বিহেইভড প্রপারলি অল দ্যা ওয়ে। শুধু যখন প্লেইন গ্রাউন্ডে নেমে এলাম, টগবগ-টগবগ করে সোজা দে ছুট। আর অঞ্জন প-কা-রো----প-কা-রো---প-কা-রো; সে কি চিৎকার! ৫ সেকেন্ড এর মধ্যে একেবারে চক্ষু সীমার বাইরে। ওর ঘোড়ার পিচ্চিটাকে দেখলাম তড়াক করে একজন কে নামিয়ে দিয়ে পিছন পিছন ছুটল।
আমরা একটু টেনশন নিয়ে হোটেলে ফিরলাম। অঞ্জন ফিরলো ঘন্টা খানেক বাদে। পিচ্চিটা ওকে সেইফলি নিয়ে এসেছে। ও এসেই ওর রুম লক করে দিলো। ওকে কেউ ডিস্টার্ব করলাম না। রাতে এলো আমার রুমে। বলে, দোস্ত তোর ওল্ড স্পাইসটা একটু দিবি? আমি বললাম, এই রাতে শেইভ করবি নাকি? অঞ্জন বলে, তুই দেখছ নাই আমি টাইট জিন্স পরছিলাম?!?।---- অ! ঐখানে এটা লাগাবি? কেটে বা ছিঁলে গেলে কোন অয়েন্টমেন্ট লাগালে ভাল হোত না? ভাব আরেকবার? ও রেগে গিয়ে বললো, তুই দিবু কিনা ক’? আমি দিয়ে বললাম, দেখেশুনে। ও গজরাতে গজরাতে ওর রুমে চলে গেল।
একটু পরেই ওর রুম থেকে দৌ্ড়াদৌড়ির আওয়াজ, এটা সেটা পড়ে যাওয়ার আওয়াজ়। উফ্, আঃ,---ইহ—ঈহ...অ-ফ্-ফ্
। হোটেল ম্যানেজ়ার সহ সবাই তখন ওর দরজা ধাক্কাতে ব্যস্ত। আমি ছাড়া
ওখান থেকে ট্যুরিস্ট বাসে চলে এলাম নৈনীতাল। তখন রাত ৮টা পেরিয়ে গেছে। হোটেল থেকে জানলাম নৈনী হ্রদটা নাকি জাস্ট ওয়াকিং ডি্সট্যান্স। আমাদের আর তর সইলো না। হোটেল ম্যানেজার বললো, টু্রিস্টদের জন্য ৮টার পর বেরুনো নিষেধ । পুলিশ ধরবে । ধুর, কে শোনে কার কথা, আমরা বললাম, কিছুই হবে না। দেখে আসি, চল্। প্রচন্ড ঠান্ডায় বেরিয়ে পরলাম। হ্রদটার কাছে পৌঁছে গেলাম হাঁটতে, হাঁটতেই।
আমাদের সামনে নৈনীহ্রদ। স্তব্ধ হয়ে গেলাম এর স্থির সৌন্দর্যে! এটা একটা প্রাকৃ্তিক হ্রদ – কিডনি শেপড্ অর্থাৎ অনেকটা শীমের বীচির মত। পাহাড়ের পাদদেশে এই হ্রদ। হ্রদটাকে পাহাড় গুলো যেন পাহারা দিয়ে রেখেছে। বিশাল উঁচু সব পাহাড়। পাহাড়ের শরীরে শত-সহস্র পাইন বা এই প্রজাতির গাছ। চারদিকের লাইটে, গাছগুলোর প্রচ্ছায়ায় হ্রদের জলটা অলিভ গ্রিন কালার ধারন করেছে। এত সুন্দর এর আগে মনে হলো দেখিনি কখনো। হঠাৎ কো্ত্থেকে পুলিশ এসে হাজির। হম্বি তম্বি করে হোটেলে ফেরৎ পাঠালো।
পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পরলাম। হ্রদে বোটিং করলাম ইচ্ছেমত। দুপুর নাগাদ মনে হল, এখানকার সবচে উঁচু পাহাড় ‘নৈনী পীক্’ এর চূড়ায় উঠবো। নৈনী পীক্ এর অল্টিটিউড ২,৬১৫ মিটার বা ৮,৫৭৯ ফিট্। পায়ে হেঁটেও ওঠা যায় অথবা এ্যাডভেঞ্চার এর জন্য আপনি ঘোড়ার পিঠেও উঠতে পারেন।
ঘোড়ার পিঠেই নৈনী পীক্ এর চূড়ায় উঠবো সিদ্ধান্ত নিলাম। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে চটপটে এবং করিৎকর্মা মাহবুব (ছদ্ম নাম), ঘোড়া ভাড়া করার দায়িত্ব নিল। আমরা ঢুকে পরলাম একটা মার্কেটে শীতের পোশাক দেখতে। মা’র জন্য একটা মিস্টি গোলাপী রঙের কার্ডিগ্যান দেখতে দেখতেই শুনি ঘোড়ার খুরের শব্দ। দোস্ত মাহবুব সাতটি ঘোড়া নিয়ে হাজির। সাথে সাতটা পিচ্চি; ঘোড়াগুলোকে যারা গাইড করবে।ঘোড়ায় এর আগে চড়িনি। এখন ঘোড়ায় চড়ে পাহাড়ে উঠতে হবে। ভাবতেই অত শীতে গায়ে গরম লেগে গেল। মাহবুবকে সবাই বললাম, দোস্ত একটু রিস্কি হয়ে যাচ্ছে না?! মাহবুব একটা ঘোড়ার ওপর অলরেডী বসে আছে। ওটা ঘোড়া না গাধা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিলো। এ্যাপারেন্টলি মোস্ট উইকেস্ট এন্ড লো হাইটেড এমাং দ্যা সেভেন! ও বললো, অত আঁতলামু মারাবু না; সবাই এ্যাংকাই যাচ্ছে (আঁতলামি করিস না; সবাই এভাবেই যাচ্ছে। বগুড়ার খাস ডায়াল্যাক্ট)। কথা বাড়ালাম না।
বিপদ হোল সবাই বড়সর ঘোড়টাই চাচ্ছে। আর মাহবুবকে ভেংগাচ্ছে - ওই লেডিছ, গাধার উপর বসছিস ক্যান? মাহবুব মুডে সিগারেট টানে আর বলে, সেক্রিফাইস বন্ধু সেক্রিফাইস! সমস্যা হোল অঞ্জন আর নীরবকে নিয়ে (ছদ্ম নাম, সরি)। সবচেয়ে বড় ঘোড়াটাই ওদের চাই। অঞ্জন সিনিয়র হওয়াতে নীরবকে ঝাড়ি টারি মেরে ঠিক করলাম। সবচেয়ে বড়, মোটা-তাজা আর উঁচু ঘোড়ার উপর বসে অঞ্জনের সে কি বিজয়ের হাসি; বললো, বড় গেরে কথা শোনা লাগে বুঝলু (বলা বাহুল্য বাড়ি বগুড়া)। আমরা চলতে শুরু করলাম। আমার ঘোড়াটা মাঝারী সাইজ়ের। তবে মাহবুবেরটা একদম বাপুরাম সাপুরের সাপ। আমাদের ক্যারাভান চলছে। কুল। কোন ঝুট ঝামেলা নেই। হঠাৎ অঞ্জন এর ঘোড়াটা আমার কাছাকাছি চলে এলো। সংগে ভু—স—স করে মুখে একটা সাউন্ড। সাথে তাক্ ধি না ধিন তাক্,- হালকার উপর দুইটা লাফ। অঞ্জনকে বললাম, দোস্ত সাবধান। অঞ্জন বলে এই শালারপুত ঘোড়াটা বড়ই সেয়ান, তুই এইটা নিবু? আমি বললাম না দোস্ত, তোর এত শখের ঘোড়া!
আমরা চলছি। অত সরু ট্র্যাক, তার নীচে আবার আলগা পাথর। ঘোড়া গুলো এত ট্রেইন্ড, একটুও এদিক ওদিক হচ্ছে না। পিচ্চিগুলো ঘোড়াগুলোকে গাইড করছে। কি বলবো, যত উপরে যাচ্ছি শ্বাস নিতে তত কষ্ট হচ্ছে। উপরে তাকালেও মেঘ, নীচে তাকাচ্ছি তাও মেঘ। ঘোড়ার খুর যেখানে পড়ছে তার থেকে ট্র্যাকের কিনারা এক হাত হবে। যাক্, পিচ্চিগুলো আগেই বলেছিলো কোন সমস্যা হলে বলতে হবে ‘পাক্রো’ অর্থাৎ ‘ধর’ বা ‘সামলাও’ । ওরা তখন ঘোড়াগুলোকে সামলে নেবে। আমরা যাচ্ছি, হঠাৎ অঞ্জনের ভয়ার্ত চিৎকার--- প-কা-রো---পাকারো। ঘুরে দেখি ওর ঘোড়াটা লাফাচ্ছে। আর পিচ্চিটা খুব চেষ্টা করছে ঘোড়াটাকে বাগে আনতে। অঞ্জন এর ব্লেজার ততক্ষনে ওর কোলে। দর দর করে ঘামাচ্ছে। টেম্পারেচর বিলো ৮ হবে তখন! এভাবে চূড়ায় ওঠা পর্যন্ত এই প-কা-রো----প-কা-রো---প-কা-রো শুনতে হোল।
চূড়ায় উঠলাম, নৈনীতালের প্যানারমিক ভিউ দেখে মজে গেলাম রীতিমতো। নৈনী হ্রদটা জাস্ট একটা বড় সর বৃক্কের মত দেখাচ্ছে। বিউটিফুল। এদিকে নীরব অঞ্জনকে খেপাচ্ছে। কি মামা, আর নিবা বড়টা? অঞ্জন বলে, আমি হাইটা নামবো তাও ঐটার পিঠে আর না। আমরা সবাই মিলে ওকে অভয় দিলাম। কয়েক ঘন্টা মুগ্ধের মত বসে থেকে রওয়ানা হোলাম আবার।
অঞ্জন এর ঘোড়া বিহেইভড প্রপারলি অল দ্যা ওয়ে। শুধু যখন প্লেইন গ্রাউন্ডে নেমে এলাম, টগবগ-টগবগ করে সোজা দে ছুট। আর অঞ্জন প-কা-রো----প-কা-রো---প-কা-রো; সে কি চিৎকার! ৫ সেকেন্ড এর মধ্যে একেবারে চক্ষু সীমার বাইরে। ওর ঘোড়ার পিচ্চিটাকে দেখলাম তড়াক করে একজন কে নামিয়ে দিয়ে পিছন পিছন ছুটল।
আমরা একটু টেনশন নিয়ে হোটেলে ফিরলাম। অঞ্জন ফিরলো ঘন্টা খানেক বাদে। পিচ্চিটা ওকে সেইফলি নিয়ে এসেছে। ও এসেই ওর রুম লক করে দিলো। ওকে কেউ ডিস্টার্ব করলাম না। রাতে এলো আমার রুমে। বলে, দোস্ত তোর ওল্ড স্পাইসটা একটু দিবি? আমি বললাম, এই রাতে শেইভ করবি নাকি? অঞ্জন বলে, তুই দেখছ নাই আমি টাইট জিন্স পরছিলাম?!?।---- অ! ঐখানে এটা লাগাবি? কেটে বা ছিঁলে গেলে কোন অয়েন্টমেন্ট লাগালে ভাল হোত না? ভাব আরেকবার? ও রেগে গিয়ে বললো, তুই দিবু কিনা ক’? আমি দিয়ে বললাম, দেখেশুনে। ও গজরাতে গজরাতে ওর রুমে চলে গেল।
একটু পরেই ওর রুম থেকে দৌ্ড়াদৌড়ির আওয়াজ, এটা সেটা পড়ে যাওয়ার আওয়াজ়। উফ্, আঃ,---ইহ—ঈহ...অ-ফ্-ফ্
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন