পত্রালিকা - ১২

১.

তবে আর কার কাছে যাবো? এবার বলেছি আমি তৃণ হই, মাটির গহনে তুমি মিশে যাও শেকড়ের মতো। তোমাকে গোপন কর, আর যদি সম্মুখে দাঁড়াও আবারো বলব - অই কাঞ্চনজংঘার সূর্যোদয়, তুমি কী দীপ্তি ছড়িয়েছো টিপে! মানুষের প্রিয় ঋতু জানতে চাইবে - কেমন আদরডাকে ঐ ঠোঁটে বাঁশি বাজিয়েছো কৃষ্ণকিশোর!
এরকম সব প্রশ্নের কাছে পড়ে আছো জলে লেখা নাম এক উদাসীন মালা। তোমারও কি কেউ নেই? তবে আর কার কাছে যাবো!


২.

সবার ঘরেই ডাকে সে, ডান হাত নেই, নীল চুড়িঅলা


৩.

রোদের ভ্রমণ শেষে সন্ধ্যার সুদূর ডাকে ভিজে চোখ ভাসে
তাকে আর কেউ না জানুক, ম্লান সন্ধ্যা জানে
দেয়াল ধরে ধরে হাঁটে, তার ডাক প্রতিধ্বনিহারা
নিঃসহায় মানুষের চোখের তারায় ভাসে তার শিশুর মুখ
ঠোঁটে তার সেই ঘুমন্ত শিশুর দাগ,
শস্য ফলে গেছে এবার বিদায় মুসাফির
মৃত্যুর আগে স্মৃতির মুক্তি নাই
হঠাৎ বৃদ্ধাশ্রমে বৃষ্টি নামে শীতে
ইচ্ছে করে ভিজে যায় সে খালি গায়,
ভিজে ভিজে সেই শিশুকে খুঁজে পায়- হারিয়ে গিয়েছে যে


৪.

আর দেখি কী আলো শব্দঝিনুক গোপন করে রাখে
চোখ দিয়ে ছোঁয়া যায় এত এত কাছে!
আমাদের প্রেম নিয়ে চলে গেছ একা পলাতক
চেয়ে দেখ এখনো ঘুম নেই চোখে, আমাদের চোখে
তোমাকে দেখে বুঝেছি মানুষ এখনো কত
ধ্যানের আঁধার নিয়ে আসে মানুষের কাছে
'আলোর রহস্যময়ী সহোদরার মত এই অন্ধকার'
তোমার সব লাবণ্যঘন অক্ষর তুলির মতো খেলা করে;
রাত যত নিঃস্ব হয়, তোমার কথারা
আত্মজ শিশুর মতো বুকের কিনারে এসে শুয়ে থাকে ...

(প্রিয়তম কবি জীবনানন্দ দাশ-এর জন্মদিনে)


৫.

পাতাশূন্য দুঃখী গাছ, শীতের আঁধার পড়ে
এই পৃথিবীর গন্ধে গাছে অসহ্য ফুল ধরে


৬.

আমি তো বলেছি দুঃখ তুমি প্রাজ্ঞ হও
যারা নেই তারা আছে
শিশুর গানের রেখার মতো বেড়াতে গেছে কাশের শাদা বন
তুমি আর খুঁজে মর কেন তাদের?
শরতের কালো মেঘ যেমন আকাশ নয়
তেমনি তাকে অস্বীকার কর।
তোমারও আছে অসংখ্য আকাশ
তোমার সন্দীপন ঘুড়ি সেখানে উড়িয়ে দাও
অক্ষমতা অন্ধ বলে বিতৃষ্ণার নগ্ন হাত আঁকড়ে ধরে শুধু।
মন্দিরের রক্তিম ঘন্টার দোলে শোননি সেদিন
আমাদের বুড়িগঙ্গা পাড়ের হরি পাগলার মধুর আরাধনা?
- 'ও মরা নদী, তোমার দু'পাড় যেন শস্য সোনায় হাসে'


৭.

আমার হারানো শিশুর কাছে যেতে হলে তোমাদের কোন্ মেলায় যেতে হবে, বলতে পারো কেউ?


৮.

রাত্রি, আমার রাত্রি, তুমি কোথায়? তারা আমার তারা?
তুমিই পৌঁছে দিও এইসব কথা নীলগিরি মাঠে
যেখানে আকাশের দিকে চেয়ে শুয়ে আছে পুরোনো বন্ধুর দল
এ ছাড়া তো লেখা তার মানে খুঁজে পাবে না কখনও !
পাখিওড়নায় গন্ধ ঝরে, আর ঝিম ছড়িয়ে যায় মনে
শুধু একবার যেতে চাই অন্ধকারে ভিজে সেই বনে
যেখানে কুমকুম প্রসাধন জন্ম দিয়েছিল রক্তপলাশ গাছ
আমি লিখতে চাই মানুষের প্রতি মুহূর্তের মুখ কেন সত্য নয়
তুমি যাকে ছড়াও, তনিমা
সেই রক্ত আবীর চোখে পড়ে, তবু এই চোখে জল নেই কেন?


৯.

আমার পথের নাম রঙমাটিয়া, তুমি তার দাগ


১০.

অনেক জাগার পর একটু বাড়ি গিয়ে ঘুমোতে চাই এখন
একটি শিশুর হাতে দোল খায় বিড়ালের ছানা
দগ্ধ মানুষ তাকে দেখে হয়ে গেলো ঝর্ণার জল
মাতৃক্রোড় ছাড়ার পরও সবাই লালন কাঙাল
আমার বাড়ির পথের শিউলি হয়ে শুধু ছড়িয়ে রইলে পায়ের পাতায়
এবার যদি চিনতে পেরে থাকো, আমায় ঘরে নিয়ে চল


১১.

কে আমাকে নেবে, মায়ের মতো দেবে


১২.

জানো তো ফিরে আসবে না ট্রেনে-দেখা মুখ, তবু তুমি কেন কাল রাতে আয়না নিয়ে শুয়েছিলে?


১৩.

সূর্য থেকে দিন লুপ্ত হলে খোঁজ চলে,
আমি এই খোঁজের কাছে ঋণী
যদি তুমি কোনোদিন এই লেখা খুঁজে পাও
মনে মনে বলে ওঠো- 'এই লেখা তুমি,
এ লেখা তো কবে থেকে চিনি!'


১৪.

রঙমশালের শরীর, পরাণ কেন নও?


১৫.

একটা পাখি ওড়ে শুধু ওড়ে যেন তার গাছ ছিল না কোনো


১৬.

আমি যা দেখি, তুমি তা দেখ, রাঙা মাসী?
তবে আমি যা দেখেছি তার দহনে ভস্ম হয় চোখ
সেই কথা বলব বলে তোমার হাত ধরে আছি
তোমার পাশে যে দাঁড়িয়ে ছিল তার চিহ্ন খোঁজ?
চলে গেছে? নিজের নিয়মে? কাছে এসে ফিরে গেল কাপুরুষ
তোমাকে জ্যোৎস্না দেখাবে বলে নিয়ে নিলো রাতের সুযোগ
কিসের জন্য এসেছিলে এমন কোলাহলে!
নরম ভোরের আলো মুড়ে রেখেছে চক্ষু শরীর
হালকা পালক যেন উড়ে গেছে মণিহারা সব দিন নিয়ে ...
ওপাড়ের জ্যোৎস্না দেখবে বলে জন্মান্ধ রাঙা মাসী
চলে গেল এক হাতে দড়ি আর অন্য হাতে আমাকে নিয়ে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অনুবাদ - Gloomy Sunday (আত্মহত্যার গান)

অনুবাদঃ “আফরি” –“ the most beautiful one!”

অনুকবিতা