পত্রালিকা - ১১
১.
কোথা থেকে ধ্বনি জাগে
কান্তিমান রাত্রি রাগে
যে কাজল চোখে লাগে;
কোন্ রাত এমন পাঠালো!
তুমি কি রয়েছো ভালো?
কমলের ভঙ্গী যার আছে
পূর্ণিমা শাড়িটির কাছে
সেই থেকে যে তিতির নেচে
নিয়ে নিলো জনমের আড়ি,
তার কাছে আমি যেতে পারি?
সরোদের তান কার তোলা
শপথদীপ্ত চোখ খোলা
রক্তআলো ভোরবেলা
বর্ণালী করে দিল হাত,
তারপরও দেবে অজুহাত?
প্রশ্ন করেছে যত প্রীতি
শঙ্খনাদ হৃদয়ের গীতি
চিঠির হলুদ থেকে ইতি,
কানে কানে কথা বলে গেলো
তুমি কি রয়েছো ভালো?
২.
এসো আজ একআকাশ ছায়া
দূরের অরণ্য তুমি ঢেকে দাও;
স্নেহ, সে কি মায়ের মতো আসে?
তুমি ছিলে শূন্যতার মতো চাওয়াহীন
লালন নূপুর শুধু, জলে মন ছিল না তোমার
আবীরের প্রীতি মেখে হয়েছিল তুমুল চুরি
আজ যদি ভুলে যাই হেমন্ত উপমা
যদি নিয়ে যায় কেউ এসে রূপকাজ ফুলকাঁথা
তার আগে বৃষ্টিরেখা, এসো আজ তোমার চোখ মুছিয়ে দিই
৩.
কিছুকাল ভুলে থাকা ভালো, কিছুদিন মূক
শিশুর খেলনা দাও
বড়ো মানুষের ভীষণ অসুখ
৪.
আকাশ থেকে বেলুড় মঠের মতো গৈরিক সাঁঝপাখি নেমে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে। এমন গোধূলীর কবিতাগুলি রুধির স্রোতের মতো। কবি বসে আছে গ্রীক শৈলীর দুর্লভ কালো কাঠের চেয়ারে- দু'আঙুলে সামান্য মারিজুয়ানা মিশ্রিত সুগন্ধী তামাক। ভাবে কাকে দিয়ে স্থাপত্যের নকশা বানাবে, বানাবে প্রাসাদের মর্মর সিঁড়ি; ভাবতে ভাবতেই শৈশবের মাতৃরেখা বরাবর হেঁটে হেঁটে চলে যায় সূর্যনাচের ধানক্ষেত। তার মনে পড়ে চরসিন্দুরের বাঁশি, মায়াপুরের খঞ্জনি আর পাঁচটা মায়া দূরে দূরে ঘুরে বেড়ায় আমন্ত্রণের মতো নিদ্রাহীন। কবি গান ধরে, তার খালি গলায় গান আর্তনাদের মতো শোনায়- 'তবু কেন কাঙাল হইনি...'
৫.
এদিকে সেই অবিশ্বাসের রাত থেকে এই আজ অব্দি
গিটারের তারে ধুলো
তোমার অশ্রুর পাশে বসে আছে তার সুর
এদিকে তুমুল আনন্দ নিয়ে বিষম জ্বরে
আমার শেষ সন্ধ্যার বোঝাপড়ার দিকে চোখ, শুধু চলে যায় রাত্রি অধীর আকাশের দিকে।
কানে এসে লাগে গাছের মর্মর,
তারা ফুটে আকুল হয়ে আছে
কান্না থামাও, বেদনা ভালো, কিন্তু কতটুকু ভালো !
৬.
প্রশ্ন করেছে চিরশিশু অভিমান
ঝুলনে ক্রন্দন, সে কি গান?
৭.
যে বুকে এত নক্ষত্র
তার কুসুম-গভীরে ফুলের আঁচ
কে বলেছে এই আমি দেখিনি
একটি হিরন্ময় সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখবার জন্য তুমি নদীর পাড়ে চুপ
হঠাৎ একটি চন্দনার অদৃশ্য হয়ে যাওয়া
দিনাজপুর লোকালের ছেড়ে যাওয়ার হুইস্যাল
জানালার বন্ধ কাচে স্থির জোনাকি
পুরোনো চাবির মতো মোহ ...
এসব ছাড়া তোমার বুকের ব্যথার
অন্য কোনো মানে আছে আর?
৮.
রাত্রির হাত ভরা ছন্দের গন্ধরাজ। এখন আমার ছুটি।
৯.
এই মুখ আর মন যেতে চায় সে দেশে
যেখানে রোদের আহ্লাদে ঢলে পড়ে পৌষালী
গোধূলীর গূঢ় রক্তিমায় ছড়িয়ে থাকে
অজস্র নীল বেলুন প্রলুব্ধির ক্যাডবেরি
যেখানে কবিতার শ্যামল বীজগুলি উন্মুখ হয়ে থাকে আর
ছায়ার মেদুর আলপনায় ঘুমিয়ে থাকে আমার যত অনিদ্রাযামিনী;
এক অসম্ভব হীরামন না হয়েও
কী করে তুমি সেই দেশে নিঃশব্দে পৌঁছাও?
১০.
এরকম শীতের শুষ্কতায় ছোট্ট চারাগাছটির কাছে হাত পেতেছে অন্ধ ভিক্ষুক- এতদিনের জমানো অশ্রুভরা হাত
১১.
অথচ কী মধুর গান গাও
কী তোমার চোখের প্রশ্রয়- মেধার অপার
ভুল যেন হয় আমার ভিতরে কাঁদায়
উদগ্রীব মায়াসুর ভাসে লাবণ্য-প্রস্তাব
এরকম গোপন থেকে শব্দ তুলে আনি
-- তবু যদি একবার কথা বল
অথচ কী মধুর গান গাও তুমি!
১২.
চোখে জাগে সূর্যমুখী ঠোঁটে ফোটে নরম বকুল, এরকম মেয়েবেলা বাজনায় ভরা ছিলো তার। আজ এতদিন পরে তার ঘরে অস্পষ্ট মন্দিরা শুনি, দেখি তার মুখ এক বিষণ্ন আয়না আর তাতে আমারি আদিম চোখ।
১৩.
পারুল বোনের মতো মেয়ে
কালো, প্রদীপের মতো চোখ, পাগল করা গানের গলা
বাবার একমুঠো রোজগার
মেয়ে দেখতে আসে কদাচিৎ কেউ কেউ বাড়ি
'মা আমি সমস্ত কাজ পারি' -- বলে বলে
চারিদিকে বেজে ওঠে আর্ত সানাই, নিষ্ফল
দুঃখী গাছ তবুও গোপন ফুলে ফুলে তার ফুটে আছে কত মন
মাথার ওপরে ভাঙা খড়ের চালা, আর সেই ছোট্ট উঠোন
সবকিছু ছেড়ে দিয়ে আড়ালে পারুল বোন
খালি পায়ে চলে গেল কীর্তনখোলা নদী
জোছনা পড়েছে পাড়ে পাড়ে, কেউ জানলো না
কোথা থেকে ধ্বনি জাগে
কান্তিমান রাত্রি রাগে
যে কাজল চোখে লাগে;
কোন্ রাত এমন পাঠালো!
তুমি কি রয়েছো ভালো?
কমলের ভঙ্গী যার আছে
পূর্ণিমা শাড়িটির কাছে
সেই থেকে যে তিতির নেচে
নিয়ে নিলো জনমের আড়ি,
তার কাছে আমি যেতে পারি?
সরোদের তান কার তোলা
শপথদীপ্ত চোখ খোলা
রক্তআলো ভোরবেলা
বর্ণালী করে দিল হাত,
তারপরও দেবে অজুহাত?
প্রশ্ন করেছে যত প্রীতি
শঙ্খনাদ হৃদয়ের গীতি
চিঠির হলুদ থেকে ইতি,
কানে কানে কথা বলে গেলো
তুমি কি রয়েছো ভালো?
২.
এসো আজ একআকাশ ছায়া
দূরের অরণ্য তুমি ঢেকে দাও;
স্নেহ, সে কি মায়ের মতো আসে?
তুমি ছিলে শূন্যতার মতো চাওয়াহীন
লালন নূপুর শুধু, জলে মন ছিল না তোমার
আবীরের প্রীতি মেখে হয়েছিল তুমুল চুরি
আজ যদি ভুলে যাই হেমন্ত উপমা
যদি নিয়ে যায় কেউ এসে রূপকাজ ফুলকাঁথা
তার আগে বৃষ্টিরেখা, এসো আজ তোমার চোখ মুছিয়ে দিই
৩.
কিছুকাল ভুলে থাকা ভালো, কিছুদিন মূক
শিশুর খেলনা দাও
বড়ো মানুষের ভীষণ অসুখ
৪.
আকাশ থেকে বেলুড় মঠের মতো গৈরিক সাঁঝপাখি নেমে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে। এমন গোধূলীর কবিতাগুলি রুধির স্রোতের মতো। কবি বসে আছে গ্রীক শৈলীর দুর্লভ কালো কাঠের চেয়ারে- দু'আঙুলে সামান্য মারিজুয়ানা মিশ্রিত সুগন্ধী তামাক। ভাবে কাকে দিয়ে স্থাপত্যের নকশা বানাবে, বানাবে প্রাসাদের মর্মর সিঁড়ি; ভাবতে ভাবতেই শৈশবের মাতৃরেখা বরাবর হেঁটে হেঁটে চলে যায় সূর্যনাচের ধানক্ষেত। তার মনে পড়ে চরসিন্দুরের বাঁশি, মায়াপুরের খঞ্জনি আর পাঁচটা মায়া দূরে দূরে ঘুরে বেড়ায় আমন্ত্রণের মতো নিদ্রাহীন। কবি গান ধরে, তার খালি গলায় গান আর্তনাদের মতো শোনায়- 'তবু কেন কাঙাল হইনি...'
৫.
এদিকে সেই অবিশ্বাসের রাত থেকে এই আজ অব্দি
গিটারের তারে ধুলো
তোমার অশ্রুর পাশে বসে আছে তার সুর
এদিকে তুমুল আনন্দ নিয়ে বিষম জ্বরে
আমার শেষ সন্ধ্যার বোঝাপড়ার দিকে চোখ, শুধু চলে যায় রাত্রি অধীর আকাশের দিকে।
কানে এসে লাগে গাছের মর্মর,
তারা ফুটে আকুল হয়ে আছে
কান্না থামাও, বেদনা ভালো, কিন্তু কতটুকু ভালো !
৬.
প্রশ্ন করেছে চিরশিশু অভিমান
ঝুলনে ক্রন্দন, সে কি গান?
৭.
যে বুকে এত নক্ষত্র
তার কুসুম-গভীরে ফুলের আঁচ
কে বলেছে এই আমি দেখিনি
একটি হিরন্ময় সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখবার জন্য তুমি নদীর পাড়ে চুপ
হঠাৎ একটি চন্দনার অদৃশ্য হয়ে যাওয়া
দিনাজপুর লোকালের ছেড়ে যাওয়ার হুইস্যাল
জানালার বন্ধ কাচে স্থির জোনাকি
পুরোনো চাবির মতো মোহ ...
এসব ছাড়া তোমার বুকের ব্যথার
অন্য কোনো মানে আছে আর?
৮.
রাত্রির হাত ভরা ছন্দের গন্ধরাজ। এখন আমার ছুটি।
৯.
এই মুখ আর মন যেতে চায় সে দেশে
যেখানে রোদের আহ্লাদে ঢলে পড়ে পৌষালী
গোধূলীর গূঢ় রক্তিমায় ছড়িয়ে থাকে
অজস্র নীল বেলুন প্রলুব্ধির ক্যাডবেরি
যেখানে কবিতার শ্যামল বীজগুলি উন্মুখ হয়ে থাকে আর
ছায়ার মেদুর আলপনায় ঘুমিয়ে থাকে আমার যত অনিদ্রাযামিনী;
এক অসম্ভব হীরামন না হয়েও
কী করে তুমি সেই দেশে নিঃশব্দে পৌঁছাও?
১০.
এরকম শীতের শুষ্কতায় ছোট্ট চারাগাছটির কাছে হাত পেতেছে অন্ধ ভিক্ষুক- এতদিনের জমানো অশ্রুভরা হাত
১১.
অথচ কী মধুর গান গাও
কী তোমার চোখের প্রশ্রয়- মেধার অপার
ভুল যেন হয় আমার ভিতরে কাঁদায়
উদগ্রীব মায়াসুর ভাসে লাবণ্য-প্রস্তাব
এরকম গোপন থেকে শব্দ তুলে আনি
-- তবু যদি একবার কথা বল
অথচ কী মধুর গান গাও তুমি!
১২.
চোখে জাগে সূর্যমুখী ঠোঁটে ফোটে নরম বকুল, এরকম মেয়েবেলা বাজনায় ভরা ছিলো তার। আজ এতদিন পরে তার ঘরে অস্পষ্ট মন্দিরা শুনি, দেখি তার মুখ এক বিষণ্ন আয়না আর তাতে আমারি আদিম চোখ।
১৩.
পারুল বোনের মতো মেয়ে
কালো, প্রদীপের মতো চোখ, পাগল করা গানের গলা
বাবার একমুঠো রোজগার
মেয়ে দেখতে আসে কদাচিৎ কেউ কেউ বাড়ি
'মা আমি সমস্ত কাজ পারি' -- বলে বলে
চারিদিকে বেজে ওঠে আর্ত সানাই, নিষ্ফল
দুঃখী গাছ তবুও গোপন ফুলে ফুলে তার ফুটে আছে কত মন
মাথার ওপরে ভাঙা খড়ের চালা, আর সেই ছোট্ট উঠোন
সবকিছু ছেড়ে দিয়ে আড়ালে পারুল বোন
খালি পায়ে চলে গেল কীর্তনখোলা নদী
জোছনা পড়েছে পাড়ে পাড়ে, কেউ জানলো না
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন