পত্রালিকা - ১০


১.


কে যে বলেছিল তাকে হেঁটে যেতে অতদূরে নিবিড় পাহাড়ে
হঠাৎ সন্ধ্যা ছড়িয়ে গেল চারিদিকে বকের পাখসাটে
কারা যেন এইদিকে এসেছিল কোনো এক মাঘে
সেও কি ছিলো সেই সাথে
জিজ্ঞাসা চিহ্নের মতো হলুদ এক পাইন পাতা
পড়ে আছে ভ্রমণের শেষ পদছাপে
এমন শীতের মিহিন তবু তার অবহেলা মনে পড়ে কেন
পাহাড়ের স্নেহ তবু কাটে না যে তার
জানে না সে, সেই সন্ধ্যা মরে গেছে, ভুলে গেছে বিদায় জানাতে

২.

পৌষকে ডেকেছি একটি ফুলের গান, রাত্রির নাম - ঘুমের স্নেহের কোল
ছায়ানটের গানের দলের তারা, তুমি তিতাস পাড়ের গোধূলী কল্লোল।

৩.

বেশিদূর যাওয়া নেই গোপন স্বপ্নে
স্পর্শের নম্রতায় মৃদু নেশা মৃদু ঘোর শুধু
শীতাক্রান্ত ক্ষুদ্র বনফুল
মায়া থেকে অধিক মায়ায় যাবো না আর।
যদিও সে শুধু কবিতার কথা বলে
অথচ কবিতায় সে কখনও থাকে না
শুধু বেশিদিন বাঁচবে না জেনে ফুলে তার এত এত স্নেহ


৪.

মাঝরাতে চোখ লাল
বালিশের কোণ ভেজা
তখন মানিনি
বন্ধু বলেছিল আমি তোর সব কথা জানি

৫.

পেছনের নিয়তিরা ব্যস্ত হয়ে ওঠুক,
ঠোঁট ছুঁয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যাক আধভোলা গান
সন্ধ্যা ভরে যে প্রদীপ সাজিয়েছিলে ওই মুখের মতন
'সেই আলো দেখেছি লক্ষ কোটি বার একা একা'
যদি বলে কেউ
-- বিশ্বাস করো না

৬.

নদীরেখাচোখে এসে বললো কাজল
ভুল ছিলো শ্রাবণের মেঘে চলাচল

৭.

বলেছিল- 'দীঘি হয়ো'
তার পাড়ে নিচু রক্তজবা হয়ে তাকানোর ধ্যানে মুছে যাবে সে

৮.

সেবিকার মুখ অনিশ্চয়তাময়
একবুক অসুখ জমে আছে
এখনও শব্দ আসে,
যে শব্দে পাতা ঝরে যায়
রংরেখার স্বপ্নজবা রুধির রুধির ...
রাত্রির প্রকোষ্ঠ জুড়ে নির্জনতার গানের মাঝে
হঠাৎ আয়নায় দেখি --
জীবনের ছবি কতটা ছুঁয়ে গেলে তবে
আমিও নিরাকার !

৯.

ওই চোখ নিয়ে তুমি কোথায় হারাবে যেখানে সন্ধ্যাতারার চিহ্ন আছে!

১০.

দিন চলে যায় রাত্রি থেমে থাকে
তুমিও লুকাও আলোয় লেখা নাম
গোপন করো রাত্রি-চোখপাতা
গান হয়ে যায় আর্তনাদের তির
দিন চলে যায় অনন্ত রাত মেলে
অরূপ নৌকো চক্ষু ছেড়ে গেলে

১১.

আর ফুল কেনা হয় না আমার, কত চাওয়া প্রতিদিন জমিয়েছি বুকে! কিছুটা হাস্যকর কিছু তার পাথর হয়ে ভারী হয়ে আছে। তবু আজ আমার চোখের দিকে কেঁদে গেল যেই রাস্তায় ফুল বিক্রেতা মেয়ে-- ভাবি, একবার তার চাওয়ার কাছে দীক্ষা নিতে যাই।

১২.

হারানো কোন রোদের কথা
বলছ সারাক্ষণ?
...ও আমার রাত্রিবেলার মন

১৩.

অন্য স্বপ্ন নিয়ে আছে বলেই কেউ কেউ বিনিদ্র, নিদ্রিত তোমাকে আমি ঈর্ষা করি না

১৪.

রক্তে আঁকিনি বলে সিঁথির অভিমান
আলোয় খুঁজিনি বলে রৌদ্র নিভে যায়
এ জগতে আর কেউ নেই - জেগে নেই
তার নাম ধরে ডাকতেই উড়ে গেল সাতটি প্রজাপতি
না ডেকে দেখেছি তাকে শুধু পাতা ঝরে যায়

১৫.

ভিজছে এখন বুকের সারস, ভিজছে আমার ঘর-জানালা
তোমায় আমি হাত বাড়িয়ে নেইনি কেন বৃষ্টি বেলা

১৬.

ক্রমশ ভারী হয়ে আসে কাছে না আসার চন্দন ঘ্রাণ, প্রাণখোলা যাযাবর এই সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে যাবে বলে

১৭.

পরম মুখের মাঝে জাত ছাপ আঁকা আছে প্রাচীন শিকারী
মাঘের রাতের বুকে নিজ রক্তের ওম আমি একা ভোগ করি

১৮.

চিঠি পেল রাত্রি রায় -
'তোমার মতো নিরাকার আর কেউ নেই'

১৯.

আর যতদূর যাবে, আমার ফসলে ভরে যাবে ততদূর

২০.

উন্মোচিত অন্ধকারে ভয় পেলে খুব,
দু'হাতে পলাশ ছিল স্বপ্ন বেচে আনা
আমি শুধুই দেখতে চেয়েছিলাম;
ওই দুটি হাত সরিয়ে নাও কিনা।

২১.

গাছে গাছে গান
তোমার চোখের মতো চোখ আছে শ্রাবণের

২২.

শরীরে তীব্র অসুখ
কেউ দেখতে আসবে কি একবার?
নরম বেদনার কাছে, শস্য স্নানের কবিতা নিয়ে

এখন কি কবিতা পারো?
নাকি শুধু শিশুদের পড়াও
যেমন আমাকে শিখিয়েছিলে রূপকথার বর্ণপরিচয়

প্রতীক্ষা জেগে থাকে- কখন বিকেল হবে,
স্কুল ছুটি হবে তোমার
দূর পথে চেয়ে থাকি
শরীরে তীব্র অসুখ
দূরের কিছুই ভালো দেখতে পাই না, না দেখতে পাওয়া ভালো?

২৩.

নির্জনে নিজের সাথে যদি দেখা হয় তুমি চলে গেলে- তুমিহীনা আমার অক্ষরে অক্ষরে যদি শিউলি ফুটে ওঠে; কেন তবে আমাদের প্রাণ খুলে আরও আরও কথা বলা নেই?



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অনুবাদ - Gloomy Sunday (আত্মহত্যার গান)

অনুকবিতা

অনুবাদঃ “আফরি” –“ the most beautiful one!”