দূরলেখা
নয়না
আমি কি একটা সাঁওতালী চোখের লাল গোধূলি পেরিয়ে যাচ্ছি? আজ রাতে ঘুমবো না। ঘুমাবে না পাহাড়িবিনোদ। এই দেখ্, যত শহুরে হুইস্কির ফায ঝেড়ে ফেলছি। আয় রাত্রি দীঘল ছায়া, আয় মহুয়া-- মহুয়া।
চোখ রেখে এসেছি নয়নার কাছে, রেখে এসেছি ঝর্নার দিন। একবার তাকে এক কীর্তনীয়ার কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম, যে পথে ভাসান, সেই নদীপথ নিয়ে গান আছে, আছে ধূমল স্বরলিপি। চক্ষুর কাছে আছে রাত্রি পুরাণ, নিদ্রাঘোর লাগে যেন কীর্তনীয়া- গাও...।
চেতনা থেকে উড়ে গেছে রোদের বাবুই। এখন হিম কুঠুরিতে কিছু গুটিসুটি রাত। আমি রেশম রাতের কাছে মুখ লুকিয়েছি। রেখায় রেখায় মোমের চিবুক তার। তাকে বলি, মিনতীর মত বাজো কালো রাত্রিবাতাস। সবাই ঘুমিয়ে গেছে নয়না, আর আমি একটা পড়ে থাকা বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে দেখলাম মেঘ, ময়ূর, শাদাগাভী, সুচিত্রা আকাশ-পাতাল। তবু কেউ জাগেনি এখনও। পুরনো খাতা খুলে দেখেছি শেষ পার, পুরনো খাতা খুলে দেখেছি নয়না, শব্দরা নিদ্রাকর। ধূসরআঁক প্রান্তরেখা থেকে সরিয়ে এনেছি চোখ। নিজেকে দেখেছি আমি রাত্রিমুখী, প্রতিফলিত।
আমি তোকে বলেছিলাম, আবার যদি দেখা হয়... ধূপ জড়ানো থাক, সন্ধ্যা গন্ধ থাক, কিছু তো থাক চিনে নেওয়ার ঘ্রাণ। একদিন বিকেলে বলেছিলাম, -
হরিণ বিকেল। আত্রেয়ীর ঢালে লাল দুল ফুল নিয়ে বৃক্ষ কন্যারা বলবে; জলকথা চলবে এখন। এই হেমন্ত অংকিত আকাশ থেকে সূর্য ঢলে গেলে, ঢলে যাবে সন্নিধি, দু'কথার মৌরি ইপ্সা। বিকেলের অকারণ ঘুম নিয়ে কবেই তো চলে গেছে মনসুন। বেড়াতে আয়, নয়না।
পূজো শেষ। আদিডুব-এ রয়েছে পৃথিবী। তারই সাথে জলমগ্ন আছি, দশমীর কাছাকাছি অনুক্ষণ, নয়না। এখন বিরাম চাই, যেমন থাকে ছুটি অথবা ঘুম। হরিণেরা পালিয়ে যাক দিগন্ত দখিনায়- পালাবার সময় দে বহ্নি সময়।
শীত আসছে। শুকনো চোখে, তোর মত শীত, নয়না। তারওপরে রেণু ওড়ার দিন আসছে, ফুল। উড়ে আসছে হিমগন্ধী দিন। মন থেকে মনিপুর, তোর দেওয়া মনিপুরী শাল।
মনে নাই, একদিন স্নান শেষ তোর। একটি স্নানের নাম শাওনচাঁপা। সমস্ত দিনের সাজ ধুয়ে স্নানঘর তখন ভারি প্রাকৃতিক। আমি স্নানঘরকে বললাম,-
দর্দ কোথা থেকে আসে !
শিসপাখি নীড় ভালবাসে!!
কিছু শায়েরীর বদলে বন্দী নর্তকীর মন জয় করতে না পেরে পেয়ালায় উঠে আসে বিষ, বিবমিষা। মুগ্ধতা আসলে আচরণে বিচারবুদ্ধি হীন।
নয়না পাখি ভালবাসে। অথবা সে-ই পাখি। শ্যামপাখি, রোদের গালে তিল তুমি দূরলেখা নিয়ে যাবে, এসো। মন যাপন হোল না শুধু। তবু সে পাখি ভালবাসে। আর গান। সে বলে, সুর একটি অরণ্যপাখি, বৃক্ষ- কথা। এখন তার মূর্ছনার পায়ে বসে আছে একটা মার্বেলের ভ্রমর।
গৌড়ীয় বৈষ্ণব তিলকের মত এই হেমন্ত দিন। ভাল আছি। অফুরান সুঘ্রাণ ছেয়ে আছে এখন এই সংক্ষিপ্ত রৌদ্রদিন, এই রূপশালী সময়। এই উজালা দিনের পর বের করে নেব প্রহর প্রহর বোনা হলদে সোয়েটার। সম্পর্কের সময়। রঙ খেলে চলে যাও সপ্তবর্ণা ঋতু, অধরা ক্রিমসন। ধ্রুবনামে বেড়ে উঠছে ভেতরে বকুল। আমি তার অমরতা চাই। নয়না পালিয়ে গেছে, নীল চুরি হয়ে গেছে আকাশের এপার ওপার।
আমি কি একটা সাঁওতালী চোখের লাল গোধূলি পেরিয়ে যাচ্ছি? আজ রাতে ঘুমবো না। ঘুমাবে না পাহাড়িবিনোদ। এই দেখ্, যত শহুরে হুইস্কির ফায ঝেড়ে ফেলছি। আয় রাত্রি দীঘল ছায়া, আয় মহুয়া-- মহুয়া।
চোখ রেখে এসেছি নয়নার কাছে, রেখে এসেছি ঝর্নার দিন। একবার তাকে এক কীর্তনীয়ার কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম, যে পথে ভাসান, সেই নদীপথ নিয়ে গান আছে, আছে ধূমল স্বরলিপি। চক্ষুর কাছে আছে রাত্রি পুরাণ, নিদ্রাঘোর লাগে যেন কীর্তনীয়া- গাও...।
চেতনা থেকে উড়ে গেছে রোদের বাবুই। এখন হিম কুঠুরিতে কিছু গুটিসুটি রাত। আমি রেশম রাতের কাছে মুখ লুকিয়েছি। রেখায় রেখায় মোমের চিবুক তার। তাকে বলি, মিনতীর মত বাজো কালো রাত্রিবাতাস। সবাই ঘুমিয়ে গেছে নয়না, আর আমি একটা পড়ে থাকা বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে দেখলাম মেঘ, ময়ূর, শাদাগাভী, সুচিত্রা আকাশ-পাতাল। তবু কেউ জাগেনি এখনও। পুরনো খাতা খুলে দেখেছি শেষ পার, পুরনো খাতা খুলে দেখেছি নয়না, শব্দরা নিদ্রাকর। ধূসরআঁক প্রান্তরেখা থেকে সরিয়ে এনেছি চোখ। নিজেকে দেখেছি আমি রাত্রিমুখী, প্রতিফলিত।
আমি তোকে বলেছিলাম, আবার যদি দেখা হয়... ধূপ জড়ানো থাক, সন্ধ্যা গন্ধ থাক, কিছু তো থাক চিনে নেওয়ার ঘ্রাণ। একদিন বিকেলে বলেছিলাম, -
হরিণ বিকেল। আত্রেয়ীর ঢালে লাল দুল ফুল নিয়ে বৃক্ষ কন্যারা বলবে; জলকথা চলবে এখন। এই হেমন্ত অংকিত আকাশ থেকে সূর্য ঢলে গেলে, ঢলে যাবে সন্নিধি, দু'কথার মৌরি ইপ্সা। বিকেলের অকারণ ঘুম নিয়ে কবেই তো চলে গেছে মনসুন। বেড়াতে আয়, নয়না।
পূজো শেষ। আদিডুব-এ রয়েছে পৃথিবী। তারই সাথে জলমগ্ন আছি, দশমীর কাছাকাছি অনুক্ষণ, নয়না। এখন বিরাম চাই, যেমন থাকে ছুটি অথবা ঘুম। হরিণেরা পালিয়ে যাক দিগন্ত দখিনায়- পালাবার সময় দে বহ্নি সময়।
শীত আসছে। শুকনো চোখে, তোর মত শীত, নয়না। তারওপরে রেণু ওড়ার দিন আসছে, ফুল। উড়ে আসছে হিমগন্ধী দিন। মন থেকে মনিপুর, তোর দেওয়া মনিপুরী শাল।
মনে নাই, একদিন স্নান শেষ তোর। একটি স্নানের নাম শাওনচাঁপা। সমস্ত দিনের সাজ ধুয়ে স্নানঘর তখন ভারি প্রাকৃতিক। আমি স্নানঘরকে বললাম,-
দর্দ কোথা থেকে আসে !
শিসপাখি নীড় ভালবাসে!!
কিছু শায়েরীর বদলে বন্দী নর্তকীর মন জয় করতে না পেরে পেয়ালায় উঠে আসে বিষ, বিবমিষা। মুগ্ধতা আসলে আচরণে বিচারবুদ্ধি হীন।
নয়না পাখি ভালবাসে। অথবা সে-ই পাখি। শ্যামপাখি, রোদের গালে তিল তুমি দূরলেখা নিয়ে যাবে, এসো। মন যাপন হোল না শুধু। তবু সে পাখি ভালবাসে। আর গান। সে বলে, সুর একটি অরণ্যপাখি, বৃক্ষ- কথা। এখন তার মূর্ছনার পায়ে বসে আছে একটা মার্বেলের ভ্রমর।
গৌড়ীয় বৈষ্ণব তিলকের মত এই হেমন্ত দিন। ভাল আছি। অফুরান সুঘ্রাণ ছেয়ে আছে এখন এই সংক্ষিপ্ত রৌদ্রদিন, এই রূপশালী সময়। এই উজালা দিনের পর বের করে নেব প্রহর প্রহর বোনা হলদে সোয়েটার। সম্পর্কের সময়। রঙ খেলে চলে যাও সপ্তবর্ণা ঋতু, অধরা ক্রিমসন। ধ্রুবনামে বেড়ে উঠছে ভেতরে বকুল। আমি তার অমরতা চাই। নয়না পালিয়ে গেছে, নীল চুরি হয়ে গেছে আকাশের এপার ওপার।