পত্রালিকা - ১৪
১.
তোমাদের ঋতুতে শুধু শিহরণ শুধু স্পন্দন
সারাবেলা ধরে ঝরে প্রাচীন উইলো
ভোর পূর্ব সূর্যের ভ্রূণ থেকে ভেসে আসে পিতার অমৃত গান
তোমাদের শিশুদের ডাক নাম- হাসি,
মেয়েদের চোখ সব অমর ইশারা ...
এইসব দেখি আর রক্তজবার ছায়ার নিচে
রক্তজবার মতো আমি ঘুমোই।
চোখ বুজলেই তালার আর্তনাদ অকাল মৃতের সুপ্ত হাড়
পিয়ানোর বুক ভেঙে পর্দা নামে শাদা পর্দা কালো পর্দা
বেন্ডেল চার্চ থেকে এখন এই সন্ধেবেলা ভেসে আসে
যুগ যুগ আগেকার ঝিম ধরা ভেসপারস
মনোহীনতার শোকগন্ধ নিতে নিতে মনে হয়
পৃথিবীর সকল অভিজ্ঞতা নিয়ে পড়ে আছে যে অন্ধকার পাথর
তার ওপর অনুপম বসে থাকা ভালো
বলা ভালো- 'তোমাদের কিছুদিন ভালো লেগেছিল।'
২.
শূন্য বাঁশিতে ফুঁ দিলে - হৃদয়
দীঘি একা হলে আয়না,
হৃদয়কে দেখা যায় না
৩.
(অকাল প্রয়াত প্রখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী দোহার ব্যান্ডের কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য স্মরণে)
*
মাতাও মাতাও গান ধরো জোরে
আমাদের স্পন্দন নিয়ে যেতে
যতই বাজুক অন্তিম পিতলঘন্টা
উড়ুক কালো পতাকার মতো ইঙ্গিতময় রাত্রি
এইসব নৈশ-ক্লাশ ছুটি হয়ে গেলে
ছুটে চলে যাবো রাঙামাটি পিয়ালপাহাড়ে
কে বলেছে যাদের স্মৃতি আছে তাদের প্রকৃত ধ্যান নেই?
খাতার মার্জিনে লিখে গেছ যে সমস্ত মাতৃসংকেত
মৃত্যুর শ্রান্ত ভিক্ষের কৌটো নাড়িয়ে নাড়িয়ে তাদের গাইবো
মাতাও মাতাও গান ধরো জোরে
অত কাছে এসে তবু মৃত্যু কি বোঝেনি?
সে শুধু জীবনকে ফুরিয়ে ফেলে -
মানুষে মানুষে হাত ছোঁয়া অক্ষয়
৪.
সুখে সবাই খুশি তবু সেও দুঃখ পারে দিতে
যেমন করে সিঁদুর বর্ণ পালটায় দশমীতে
৫.
আফ্রোদিতি বা যীশুরে যে ডেকে ডেকে হোল ক্ষয়
বিরল জোছনাতে যেন তার ইচ্ছামৃত্যু হয়
৬.
নেশালু রঙেরা ওড়াউড়ি করে,
সার্ফ-এক্সেলে মেশে
গন্ধের হাসি-
তোমার ছাদের রেলিঙ-টাকে
ভীষণ রকম ভালোবাসি
৭.
(সুন্দরবন নিকটবর্তী রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প স্থাপনের প্রতিবাদে)
*
অরণ্য পুষ্প নির্ঝর আমাদের ভুল হয়েছিল, বলেছিলাম প্রতিটি তৃণের জন্মের আগে আমরা আশীর্বাদ করে যাব। সুন্দরী গেওয়া গড়ান কেওড়া ক্ষমা কর- আমরা এখনও পারিনি। ডিজেলরেখা ধরে সবাই চলেছি রিহ্যাব সেন্টারের দিকে। তোমরা কারা বিষের নক্সা আঁকো ঈশ্বরের বাগানে? ছড়িয়ে দিচ্ছ কয়লার ধোঁয়া, কারখানার কালি, কার্বন মনোক্সাইড- থামিয়ে দিচ্ছ নিসর্গের গান। আরক্ত সন্ধ্যায় তোমাদের চোখের জলে জাল ফেলেছি হে আদিমের শাশ্বত স্বাক্ষর, প্রতিটি পাখি মহিষ বাঘ। হে কাজল হরিণ, আমাদের শুধু চলে যেতে হবে লোকালয়ে - পরিণতিহীন লক্ষ্যে, যে মৃত্তিকায় কোন সবুজাভা লাগেনি কখনো। ক্রমাগত চিহ্নহীনতার দিকে আমাদের শিশুরা তাকিয়ে আছে ভয়ে অথচ আমাদের সুখের শেষ কথাটি স্বদেশ...
জানি সুন্দরবন এখনও যাওনি মরে
তোমাকে বাঁচাতে মাথার মধ্যে পবিত্র ক্রোধ ঘোরে
৮.
তুমি কি আসতে পারো একদিন
জোনাকি হয়ে? ভোররাতে?
আমি নিদ্রায় ভারি আনাড়ি
মৃদু শুনে যেও বেগম আক্তার 'জোছনা করেছে আড়ি'
৯.
এত মৃত্যু এত মৃত্যু ইরাক সিরিয়া সুদান ...
করুণার বৃষ্টি করো, গান, করো আলো
জীবন লেখো, লেখো আয়ু, লেখো আয়ু
বৃষ্টি করো দয়ার, গান হোক, করো আলো এই অন্ধকার
১০.
এই রাংতা কুচি বনে গান আছে,
ব্যথায় যারা আছে তারা তা বোঝে না, শিশু বোঝে।
অথচ কেউ তাদের সন্দেহ করে না
তারা চায় কারো সুভদ্র হাসি থেকে
তুলে নিতে পারবে কোনোদিন শরীরে পিরামিডের আয়ু
বুদ্ধের ধ্যান ভেঙে গেলেও তারা
বাগানে বাগানে খোঁড়ে সমাধির পাথর
তাদের চোখ প্রতিফলনের, মন থির ডুব সাঁতারের।
তারা যাযাবর হয়, বাড়িতে কখনো থাকে না
অথচ বাড়ির কথাই সারাদিন বলে-
সেখানে বেতের ঝুড়িতে আপেল, ঘরে ঢুকতেই বাগান আর বাজনা
সরোদের তার বেয়ে স্বর্ণলতা মেঘ ছোঁয় রোজ
ক্ষুর শান দেয় চামড়ার ফিতেয়, চামড়া কাটবে বলে
এসবও আছে তাদের ঘরে- প্রণয়ে- অন্দরে।
তারা শিশুর থেকেও অবুঝ
বেদনায় আছে যারা ঘোর অমাবস্যাও
তাদের সন্দেহ করে না কোনোদিন, নিশ্চিন্তে বুকে বসে থাকে
১১.
রঙ আমাকে শাসন করে সাপের বিষের রাজা
চৈত্র দুপুর শাদা ব্লাউজ পিঠের দিকে ভেজা
১২.
অমল দীঘির পাড়ে শুধু জলে লেখা
একা একা বটের ছায়া, তবু তার শব্দ শোনা যায়;
কিন্তু নৈঃসঙ্গের কিছু আবছায়া থাকে
সেই অস্পষ্টতা বেরিয়ে আসে, খুলে দেয় রেশমের ফোয়ারা
অথবা শিরা কেটে বের করে আনে তীব্র রক্তপাত, দূর্ঘটনা
লাল রুমাল উড়িয়ে দিয়ে
শেষ রাত্রির ট্রেনের কাছে মিনতি করেছি- থামো, থামো, থামো
কারণ পুরোটা যায় না দেখা, শেষ গ্রন্থ বুকে নিয়ে সিলভিয়া প্ল্যাথ
ঘুমিয়ে ছিলেন, যতক্ষণ মেঘরাত্রি বুকের উপর পড়ে থাকে তার।
১৩.
জল পেতে হলে এ জগৎ করে আকশের দিকে প্রার্থনা
তোমার কাছে জল চেয়েছি, যে-জল বৃষ্টি দিতে পারবে না
তৃষ্ণা হারালে পাথর আমাকে একটি নদীও সইবে না
তোমার কাছে জল চেয়েছি, আর চেয়েছি সে তৃষ্ণা
১৪.
ও সূর্যচিল আমাকে পাখায় বাঁধো, মানুষের উড়ে যাওয়া ব্যথা দেখে যাই কিছু। শময়িতা, আমাকে বিষণ্ন করে রেখো না, ছেড়ে এলে যে বেদনা আমি তার বন্ধু নই। আমি বালক শিশু, সারি সারি শিরীষের বনে আমার উজ্জ্বল বনবাস। আমার নির্জন সাক্ষী থাক দেবদারু। আমার নীড় পাখির নীড়, আমলকীর ডালে আমি জানি আমার জন্যে পাখি রেখে যাবে কিছু। একশো আটখানি ঘুম আমাকে জড়িয়ে রেখেছে, ওরা নীল পদ্ম নয়। নিদ্রাহীন তোমার চোখ বাতাসে উড়ে যাক। বল, শরীর অস্ত যায় নাকি মন, রক্ত কি পানীয়? পূর্বজন্ম থেকে এইটুকু স্মৃতি আমি বয়ে এনেছি - তোমার চোখের জলে ভরে উঠেছিল সমস্ত আঙুর অর্কিড ... শময়িতা, এভাবে আমাকে আর বিষণ্ন করে রেখো না ... আমি তোমার শিশু, তোমার আমি ছাড়া আর কেউ নেই
১৫.
কিছু অক্ষরে এ জীবন বলে দিতে পারি
আমার জন্ম ছিল এক নারী, আমার মৃত্যু ছিল এক নারী
১৬.
হাতে অল্প সময়, ঐ যে হেমন্তলীন পাতার আড়াল থেকে
পাখি তার ডাকে আমাদের সতর্ক করছে
অসমাপ্ত চাহনি এখনো অসমাপ্ত হুইসপার
নীল টালি-বারান্দায় বসে পোষা বেড়ালের সাথে খেলা কর
গোপন আড়ি ভেঙে নীলা আন্টির কাছে আসন্ন শীতের জন্য
একটা রক্তমেঘ আঁকা সোয়েটার বোনা শিখে নিতে যাও
চোখের কোয়ার্টজ থেকে ধুয়ে ফেল সময়ের ধুলো
শিলাপৃথিবীর গভীর খুঁড়ে আমরা অর্জন করি সোনার আকর
হাতে আর সময় নেই, বল দেখি
আমার উঠোন খুঁড়ে রেখেছো কি প্রাচীন মহুয়া
প্রেম থেকে দূরে রেখেছো কি তাকে?
১৭.
গভীর রাত্রি, কার মনে মনে কথা
ঝুম বৃষ্টিতে শোনা যায় -
‘ও যেন শেষ বাসটি পায়’
১৮.
আমি ও তনিমা দেখে গেছি একই তারা
অন্ধের হাত ছুঁয়ে আছে অন্ধরা
১৯.
ধূলোতে পড়ে আছি দীর্ঘ দিন, আমাকে হাত বাড়াও মোছাও আজ
যেভাবে গুনগুন ঘুম পাড়ায়, মিলেমিশে ফোটে গন্ধরাজ
২০.
অপচয় সুরের হয় বাঁশির কখনও নয়
আর আমি আমার ঘরটা ক্রমশ ছোট হয়ে আসছিল বলে,
স্নানঘরে টিপ টিপ একঘেয়ে জল পড়ছিল বলে-
অমরনাথের মতো কোন পথে রাত্রিবেলা হেঁটে যাচ্ছি
অনেকেই এর মধ্যে জানি ডাকাডাকি করে ফিরে গেছে
জন্মদিনের কার্ড গুজে দিয়ে গেছে দরজায়
আহা পাতাহারা গাছ মনে রেখোনা মন
এসময় জানি প্রণয়ক্ষমতা আশ্চর্য ছড়িয়ে পড়ে
গালে লেগে থাকে মুমূর্ষু অশ্রু
মেহেদি হাতের শ্লোক শুনে শুনে সে ঘুমোতে চেষ্টা করে
আমি আর কী করতে পারতাম!
সে শুধু একাকী থাকল বলে,
গানে গানে শুধু বিষণ্ন সুর দিল বলে
২১.
ময়ূর বিবশ হয় মেঘের স্বভাবে
হাতছানি পেলে ঠিক মানুষও যে ভাবে
অতটুকু মায়া পেলে, কীভাবে সামলাবে?
২২.
বাসাবদল হোল আমার, তুমি সেই বাসাতেই উঠবে
পুরাতনের স্মৃতি এবার তোমায় ঘিরেই জুটবে
আমি যাবো চরসুন্দর, সন্ধ্যা করে আসবে
আকাশের অই সব তারারা মানুষ হয়ে জাগবে
বাসাবদল হোল আমার, একা সেই বাসাতেই উঠবে
২৩.
কবিতা তো রোজ ঘরে ফেরে না
ছন্নছাড়ার পেন্সিল সে, তারা জ্বলে জ্বলে তাকে সমর্থন জানায়
মাঝে মাঝে পাল্টানো ভালো, বদলানো ভালো রূপকৌশল
শূন্য দীঘিতে পদ্ম জেগে উঠলে তার সুনাম বেড়ে যায়
চোখের ভাষায় অন্ধ হব বলে
চোখ ছেড়ে মুখের ভাষায় নেমে আসি
লিখি অরণ্যের সারল্য- উড়ে যাওয়া তুষ- মদে ভেজানো মৃদঙ্গ
ঠাকুমার শাদা শাড়ির আঁচল যেমন আসবাবে,
কপালে স্নেহ বুলিয়ে দেয়, এই পেন্সিলও তাই-
ভেতরের গুপ্ত কথা গূঢ় গান বের করে আনে।
এখন যেমন কূট সিরাপ থেকে উঠে আসছে জল পানের ইচ্ছে...
কবিতা তো রোজ রোজ ঘরে ফেরে না
ক্ষণে ক্ষণে রূপ পাল্টায়, ভিন্ন ভাষায় কথা বলে
নইলে আমি কীভাবে রাখি তোমার বিবিধ ডাকনাম,
কথা বলি অহরহ অচেনা ভাষায়!
তোমাদের ঋতুতে শুধু শিহরণ শুধু স্পন্দন
সারাবেলা ধরে ঝরে প্রাচীন উইলো
ভোর পূর্ব সূর্যের ভ্রূণ থেকে ভেসে আসে পিতার অমৃত গান
তোমাদের শিশুদের ডাক নাম- হাসি,
মেয়েদের চোখ সব অমর ইশারা ...
এইসব দেখি আর রক্তজবার ছায়ার নিচে
রক্তজবার মতো আমি ঘুমোই।
চোখ বুজলেই তালার আর্তনাদ অকাল মৃতের সুপ্ত হাড়
পিয়ানোর বুক ভেঙে পর্দা নামে শাদা পর্দা কালো পর্দা
বেন্ডেল চার্চ থেকে এখন এই সন্ধেবেলা ভেসে আসে
যুগ যুগ আগেকার ঝিম ধরা ভেসপারস
মনোহীনতার শোকগন্ধ নিতে নিতে মনে হয়
পৃথিবীর সকল অভিজ্ঞতা নিয়ে পড়ে আছে যে অন্ধকার পাথর
তার ওপর অনুপম বসে থাকা ভালো
বলা ভালো- 'তোমাদের কিছুদিন ভালো লেগেছিল।'
২.
শূন্য বাঁশিতে ফুঁ দিলে - হৃদয়
দীঘি একা হলে আয়না,
হৃদয়কে দেখা যায় না
৩.
(অকাল প্রয়াত প্রখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী দোহার ব্যান্ডের কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য স্মরণে)
*
মাতাও মাতাও গান ধরো জোরে
আমাদের স্পন্দন নিয়ে যেতে
যতই বাজুক অন্তিম পিতলঘন্টা
উড়ুক কালো পতাকার মতো ইঙ্গিতময় রাত্রি
এইসব নৈশ-ক্লাশ ছুটি হয়ে গেলে
ছুটে চলে যাবো রাঙামাটি পিয়ালপাহাড়ে
কে বলেছে যাদের স্মৃতি আছে তাদের প্রকৃত ধ্যান নেই?
খাতার মার্জিনে লিখে গেছ যে সমস্ত মাতৃসংকেত
মৃত্যুর শ্রান্ত ভিক্ষের কৌটো নাড়িয়ে নাড়িয়ে তাদের গাইবো
মাতাও মাতাও গান ধরো জোরে
অত কাছে এসে তবু মৃত্যু কি বোঝেনি?
সে শুধু জীবনকে ফুরিয়ে ফেলে -
মানুষে মানুষে হাত ছোঁয়া অক্ষয়
৪.
সুখে সবাই খুশি তবু সেও দুঃখ পারে দিতে
যেমন করে সিঁদুর বর্ণ পালটায় দশমীতে
৫.
আফ্রোদিতি বা যীশুরে যে ডেকে ডেকে হোল ক্ষয়
বিরল জোছনাতে যেন তার ইচ্ছামৃত্যু হয়
৬.
নেশালু রঙেরা ওড়াউড়ি করে,
সার্ফ-এক্সেলে মেশে
গন্ধের হাসি-
তোমার ছাদের রেলিঙ-টাকে
ভীষণ রকম ভালোবাসি
৭.
(সুন্দরবন নিকটবর্তী রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প স্থাপনের প্রতিবাদে)
*
অরণ্য পুষ্প নির্ঝর আমাদের ভুল হয়েছিল, বলেছিলাম প্রতিটি তৃণের জন্মের আগে আমরা আশীর্বাদ করে যাব। সুন্দরী গেওয়া গড়ান কেওড়া ক্ষমা কর- আমরা এখনও পারিনি। ডিজেলরেখা ধরে সবাই চলেছি রিহ্যাব সেন্টারের দিকে। তোমরা কারা বিষের নক্সা আঁকো ঈশ্বরের বাগানে? ছড়িয়ে দিচ্ছ কয়লার ধোঁয়া, কারখানার কালি, কার্বন মনোক্সাইড- থামিয়ে দিচ্ছ নিসর্গের গান। আরক্ত সন্ধ্যায় তোমাদের চোখের জলে জাল ফেলেছি হে আদিমের শাশ্বত স্বাক্ষর, প্রতিটি পাখি মহিষ বাঘ। হে কাজল হরিণ, আমাদের শুধু চলে যেতে হবে লোকালয়ে - পরিণতিহীন লক্ষ্যে, যে মৃত্তিকায় কোন সবুজাভা লাগেনি কখনো। ক্রমাগত চিহ্নহীনতার দিকে আমাদের শিশুরা তাকিয়ে আছে ভয়ে অথচ আমাদের সুখের শেষ কথাটি স্বদেশ...
জানি সুন্দরবন এখনও যাওনি মরে
তোমাকে বাঁচাতে মাথার মধ্যে পবিত্র ক্রোধ ঘোরে
৮.
তুমি কি আসতে পারো একদিন
জোনাকি হয়ে? ভোররাতে?
আমি নিদ্রায় ভারি আনাড়ি
মৃদু শুনে যেও বেগম আক্তার 'জোছনা করেছে আড়ি'
৯.
এত মৃত্যু এত মৃত্যু ইরাক সিরিয়া সুদান ...
করুণার বৃষ্টি করো, গান, করো আলো
জীবন লেখো, লেখো আয়ু, লেখো আয়ু
বৃষ্টি করো দয়ার, গান হোক, করো আলো এই অন্ধকার
১০.
এই রাংতা কুচি বনে গান আছে,
ব্যথায় যারা আছে তারা তা বোঝে না, শিশু বোঝে।
অথচ কেউ তাদের সন্দেহ করে না
তারা চায় কারো সুভদ্র হাসি থেকে
তুলে নিতে পারবে কোনোদিন শরীরে পিরামিডের আয়ু
বুদ্ধের ধ্যান ভেঙে গেলেও তারা
বাগানে বাগানে খোঁড়ে সমাধির পাথর
তাদের চোখ প্রতিফলনের, মন থির ডুব সাঁতারের।
তারা যাযাবর হয়, বাড়িতে কখনো থাকে না
অথচ বাড়ির কথাই সারাদিন বলে-
সেখানে বেতের ঝুড়িতে আপেল, ঘরে ঢুকতেই বাগান আর বাজনা
সরোদের তার বেয়ে স্বর্ণলতা মেঘ ছোঁয় রোজ
ক্ষুর শান দেয় চামড়ার ফিতেয়, চামড়া কাটবে বলে
এসবও আছে তাদের ঘরে- প্রণয়ে- অন্দরে।
তারা শিশুর থেকেও অবুঝ
বেদনায় আছে যারা ঘোর অমাবস্যাও
তাদের সন্দেহ করে না কোনোদিন, নিশ্চিন্তে বুকে বসে থাকে
১১.
রঙ আমাকে শাসন করে সাপের বিষের রাজা
চৈত্র দুপুর শাদা ব্লাউজ পিঠের দিকে ভেজা
১২.
অমল দীঘির পাড়ে শুধু জলে লেখা
একা একা বটের ছায়া, তবু তার শব্দ শোনা যায়;
কিন্তু নৈঃসঙ্গের কিছু আবছায়া থাকে
সেই অস্পষ্টতা বেরিয়ে আসে, খুলে দেয় রেশমের ফোয়ারা
অথবা শিরা কেটে বের করে আনে তীব্র রক্তপাত, দূর্ঘটনা
লাল রুমাল উড়িয়ে দিয়ে
শেষ রাত্রির ট্রেনের কাছে মিনতি করেছি- থামো, থামো, থামো
কারণ পুরোটা যায় না দেখা, শেষ গ্রন্থ বুকে নিয়ে সিলভিয়া প্ল্যাথ
ঘুমিয়ে ছিলেন, যতক্ষণ মেঘরাত্রি বুকের উপর পড়ে থাকে তার।
১৩.
জল পেতে হলে এ জগৎ করে আকশের দিকে প্রার্থনা
তোমার কাছে জল চেয়েছি, যে-জল বৃষ্টি দিতে পারবে না
তৃষ্ণা হারালে পাথর আমাকে একটি নদীও সইবে না
তোমার কাছে জল চেয়েছি, আর চেয়েছি সে তৃষ্ণা
১৪.
ও সূর্যচিল আমাকে পাখায় বাঁধো, মানুষের উড়ে যাওয়া ব্যথা দেখে যাই কিছু। শময়িতা, আমাকে বিষণ্ন করে রেখো না, ছেড়ে এলে যে বেদনা আমি তার বন্ধু নই। আমি বালক শিশু, সারি সারি শিরীষের বনে আমার উজ্জ্বল বনবাস। আমার নির্জন সাক্ষী থাক দেবদারু। আমার নীড় পাখির নীড়, আমলকীর ডালে আমি জানি আমার জন্যে পাখি রেখে যাবে কিছু। একশো আটখানি ঘুম আমাকে জড়িয়ে রেখেছে, ওরা নীল পদ্ম নয়। নিদ্রাহীন তোমার চোখ বাতাসে উড়ে যাক। বল, শরীর অস্ত যায় নাকি মন, রক্ত কি পানীয়? পূর্বজন্ম থেকে এইটুকু স্মৃতি আমি বয়ে এনেছি - তোমার চোখের জলে ভরে উঠেছিল সমস্ত আঙুর অর্কিড ... শময়িতা, এভাবে আমাকে আর বিষণ্ন করে রেখো না ... আমি তোমার শিশু, তোমার আমি ছাড়া আর কেউ নেই
১৫.
কিছু অক্ষরে এ জীবন বলে দিতে পারি
আমার জন্ম ছিল এক নারী, আমার মৃত্যু ছিল এক নারী
১৬.
হাতে অল্প সময়, ঐ যে হেমন্তলীন পাতার আড়াল থেকে
পাখি তার ডাকে আমাদের সতর্ক করছে
অসমাপ্ত চাহনি এখনো অসমাপ্ত হুইসপার
নীল টালি-বারান্দায় বসে পোষা বেড়ালের সাথে খেলা কর
গোপন আড়ি ভেঙে নীলা আন্টির কাছে আসন্ন শীতের জন্য
একটা রক্তমেঘ আঁকা সোয়েটার বোনা শিখে নিতে যাও
চোখের কোয়ার্টজ থেকে ধুয়ে ফেল সময়ের ধুলো
শিলাপৃথিবীর গভীর খুঁড়ে আমরা অর্জন করি সোনার আকর
হাতে আর সময় নেই, বল দেখি
আমার উঠোন খুঁড়ে রেখেছো কি প্রাচীন মহুয়া
প্রেম থেকে দূরে রেখেছো কি তাকে?
১৭.
গভীর রাত্রি, কার মনে মনে কথা
ঝুম বৃষ্টিতে শোনা যায় -
‘ও যেন শেষ বাসটি পায়’
১৮.
আমি ও তনিমা দেখে গেছি একই তারা
অন্ধের হাত ছুঁয়ে আছে অন্ধরা
১৯.
ধূলোতে পড়ে আছি দীর্ঘ দিন, আমাকে হাত বাড়াও মোছাও আজ
যেভাবে গুনগুন ঘুম পাড়ায়, মিলেমিশে ফোটে গন্ধরাজ
২০.
অপচয় সুরের হয় বাঁশির কখনও নয়
আর আমি আমার ঘরটা ক্রমশ ছোট হয়ে আসছিল বলে,
স্নানঘরে টিপ টিপ একঘেয়ে জল পড়ছিল বলে-
অমরনাথের মতো কোন পথে রাত্রিবেলা হেঁটে যাচ্ছি
অনেকেই এর মধ্যে জানি ডাকাডাকি করে ফিরে গেছে
জন্মদিনের কার্ড গুজে দিয়ে গেছে দরজায়
আহা পাতাহারা গাছ মনে রেখোনা মন
এসময় জানি প্রণয়ক্ষমতা আশ্চর্য ছড়িয়ে পড়ে
গালে লেগে থাকে মুমূর্ষু অশ্রু
মেহেদি হাতের শ্লোক শুনে শুনে সে ঘুমোতে চেষ্টা করে
আমি আর কী করতে পারতাম!
সে শুধু একাকী থাকল বলে,
গানে গানে শুধু বিষণ্ন সুর দিল বলে
২১.
ময়ূর বিবশ হয় মেঘের স্বভাবে
হাতছানি পেলে ঠিক মানুষও যে ভাবে
অতটুকু মায়া পেলে, কীভাবে সামলাবে?
২২.
বাসাবদল হোল আমার, তুমি সেই বাসাতেই উঠবে
পুরাতনের স্মৃতি এবার তোমায় ঘিরেই জুটবে
আমি যাবো চরসুন্দর, সন্ধ্যা করে আসবে
আকাশের অই সব তারারা মানুষ হয়ে জাগবে
বাসাবদল হোল আমার, একা সেই বাসাতেই উঠবে
২৩.
কবিতা তো রোজ ঘরে ফেরে না
ছন্নছাড়ার পেন্সিল সে, তারা জ্বলে জ্বলে তাকে সমর্থন জানায়
মাঝে মাঝে পাল্টানো ভালো, বদলানো ভালো রূপকৌশল
শূন্য দীঘিতে পদ্ম জেগে উঠলে তার সুনাম বেড়ে যায়
চোখের ভাষায় অন্ধ হব বলে
চোখ ছেড়ে মুখের ভাষায় নেমে আসি
লিখি অরণ্যের সারল্য- উড়ে যাওয়া তুষ- মদে ভেজানো মৃদঙ্গ
ঠাকুমার শাদা শাড়ির আঁচল যেমন আসবাবে,
কপালে স্নেহ বুলিয়ে দেয়, এই পেন্সিলও তাই-
ভেতরের গুপ্ত কথা গূঢ় গান বের করে আনে।
এখন যেমন কূট সিরাপ থেকে উঠে আসছে জল পানের ইচ্ছে...
কবিতা তো রোজ রোজ ঘরে ফেরে না
ক্ষণে ক্ষণে রূপ পাল্টায়, ভিন্ন ভাষায় কথা বলে
নইলে আমি কীভাবে রাখি তোমার বিবিধ ডাকনাম,
কথা বলি অহরহ অচেনা ভাষায়!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন