পত্রালিকা - ১৩

১.

বাইরে যা তুমুল বৃষ্টি এর চেয়ে বেশি তার চোখের মধ্যে আছে।
আজ বিকেলে তার কনিষ্ঠা ধরে আছি গুটিসুটি সেড-এ। পার্কে তেমন কেউ নেই, তার মুখ ভার। বাবা চলে গেছে এই শনিবার। ফ্লাস্কে ভরে চা বিক্রি করে নয়নতারা। বললাম, মারে তুই তো একটা গোটা পৃথিবী চালাস! রাজহাঁস যেমন ডুব দিয়ে উঠে আসে আর তার গ্রীবায় জ্বলে ওঠে আলোর ঝিলিক, সেই আলো তার চোখে জ্বলে উঠলো মুহূর্তকাল- আবার নিভে গেল। আমিও মৌন রইলাম, নয়নতারার জন্য আর সব কথা বাকী রইলো অন্য সব বিকেলের কাছে জমা
আজ বিকেলে তার কনিষ্ঠা ধরে আছি
শুধু বৃষ্টিতে ছড়িয়ে আছে তার ক্ষমা

২.

কে যেন পাথর, তাই পাহাড়ের খাড়ায় বসে আছে।
কে যেন পুরুষ
জীবনানন্দ, তাই একলা বসে আছে

৩.

সুদূর অতীত থেকে
চেয়ে আছো পাথর বসানো চোখ
মাঝে মাঝে মনে হয় একদিন খামচে ধরে সে পাথর তুলে এনে
চাঁদের ডোমে ছুঁড়ে মারি, যেন জ্যোৎস্নার মৌমাছির সুর ঝরে যায়
ঝরে যায় ...

৪.

ব্যথার সর্বস্ব আছে, শুধু হাসি নেই
সব হাসি লেগে আছে আমার ঐ শিশুটির গালে

৫.

বড়ো বেশি কথা হোল বস্তুত যা অনুচিত
শিশুর কৌতূহলে ক্রিস্পি বাদামে ...
এদিকে রাত নামাচ্ছে অসমাপ্ত আলিঙ্গন
টাচস্ক্রিন ... আঙুলের দাগ
শাহানা বাজপেয়ী ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে

দেখেছি নম্রতা আরো অন্ধকার করে
আর শহরের দেয়াল সব সংকেতময়
অসম্ভব লেখা আছে চাণক্য নীতি, অশ্রুহিম এলিজি
সূর্যের দিকে বাঁকানো লতার মতো হাসি সোনার বুদ্ধের ঠোঁটে
কে তুমি তীব্র ভ্রম আমাকে দিচ্ছ হাজারদুয়ারির চাবি!

৬.

নীরবতা, বহুদিন কারো আপন হয়েছো কখনও?
নীরবতা, কথা আছে কান পেতে শোন।
৭.

বিবর্ণ হবে সব পাখি, ঠাকুর বাড়ির রক্তপলাশ-ও
যদি আর-কারে ভালোবাস, যদি আর ফিরে নাহি আস

৮.

রেডিওতে বেজে ওঠে টানেল বিভ্রম, শব্দের আজ ভাষা নেই
শুধু চেয়ে থাকি, এসো
শূন্যের করাতে চেরা বসন্তে হেসেছে কোন বোকা মেয়ে
তবু প্রান্তরের পথে তার নাচ হয়ে গেল রংধনু
সাঁওতালী পর্বতে বেলফুলের গন্ধে তার প্রার্থনা -
‘অগ্নি হে, হে পূষণ ফিরিয়ে নাও ক্ষুধা, আনো আলোকিত চুম্বন’
এ কোনো ছায়াচিত্র নয়, শুধু চেয়ে থাকি, এসো
আমি তো দেখেছি যতটুকু দেখে এ চোখ তারও চেয়ে বেশি

একটি সবুজ ঘোড়া, তোমার কিসের এত তাড়া ছিল!

৯.

বন্ধু কেন কাল আসেনি, শচীন কর্তা হারায় সুরে
বন্ধু যেমন কাঁদায় ভারি, তেমন বন্ধু আদর করে

১০.

কল ব্রীজ
ঝাল চানাচুর
দিন ঘুমোবার

ড্রয়িংরুম
জিনের বোতল
কিশোর কুমার

ফেসবুক
ছুটকো স্ট্যাটাস
আজ রবিবার

১১.

আমার দিকে তাকালি না, জ্বরে রোগে ভীষণ ক্ষত
তোকেই যেন দেখতে থাকি ফুটলি দূরের ফুলের মতো
আলোর দিকে খুব তাকালি, ফুটলি কেন বললি নাতো!
আমার দিকে তাকালি না, দেখতে কালো, পুড়ছি এতো।

১২.

নৈশ-বিরতির ঘন্টা যেন কোকেইন, খেলছে ...
ক্রমেই বেড়ে চলেছিল ক্যারামের লাল গুটির ঈপ্সা
মনে পড়ছে স্নানোৎসব সারসের উদ্ভিন্ন পালক,
তাসের রাজার দেখা নেই
যে বৃক্ষের ছায়া পড়ে না তার নিচে মাতৃহীন কুকুর ছানা ডাকছে
এই মনুষ্য জন্ম সইতে না পারার বেদনা মনে করিয়ে দিচ্ছে
বুদ্ধের বাড়ির হরিণ বিনা স্নেহে বেড়ে উঠেছিল,
অমৃতের বনে হরিণদের অনাথাশ্রমে যাবো
এমন তো কেউ নেই শব্দ থেকে
নৈঃশব্দের দেবীর কাছে যাবে আর নিঃস্ব হবে না!

১৩.

জগজিৎ কেঁদে ওঠেন, তোমরা ভাবো গান

১৪.

তবুও স্টেশন ভালোবাসি, ওখানে মানুষ কাঁদে
ক'দিনের বন্ধন খুলে ফেলে মানুষ একলা হয়

একা হতে কেন মায়া লাগে!

১৫.

মোমের পুতুল মমীর দেশের মেয়ে
নাচলোনা ঘরবন্দী হোল
না গাওয়া এক গানের ভেতর জ্বলছে মোমের দুঃখগুলো

১৬.

গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে, জ্বর নাকি বেদনামুগ্ধ আমরা?
বৃষ্টিতে ভিজে শ্রাবণকে জেনেছি কিছুটা
চিনেছি সে রূপরেখা অথির বিজুরি
তুমি আমাদের কে আমাদের, তুমি কি সেই হাসি?
চার্চের গান থেকে ছড়িয়ে পড়ছো হিমতারা পাখিপ্রাণ
ডাকছো- নির্বাসন ছেড়ে তোরা আয়, আয়, খেতে দিয়েছি তোদের...

গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে
এখনও পাম বনে খুঁজে পাব আমরা অজস্র সমাধি
একদিন বলেছিলাম, আমাদের ব্যথার কাছে
তোমাদের চক্ষু নুয়ে রবে
যদি পারো বল আজ বলে ওঠ -
পৃথিবীর সমস্ত সৈনিকরা আজ থেকে স্বাধীন

১৭.

সেই গানের স্কুলের বিকেলগুলো মনে আছে,
মনে আছে মেরুন কার্ড লগ্ন তারিখ
গা ভর্তি সোনা।
পাগলী তোর গানের খাতা আমার কাছে

কোনোদিনও ফেরত দেব না।

১৮.

প্রেম হয়ে থাক্ ব্যথা, সে খুব একাকী
আমার তো রবিনাথ গানে ডুবে থাকি
ব্যথার যে কেউ নেই তাই তাকে ডাকি

১৯.

তোমার গুনগুন ভালো লাগে আমার
পার্কের কোণটাতে বসে
তুমি যখন গেয়ে ওঠো হঠাৎ
ঐ শিশুও কান পেতে শোনে

টলমল হেঁটে এসে
তোমার কোলে ওঠার জন্য দু'হাত বাড়িয়ে দেয়

২০.

চিৎকার করে কাঁদি না, রাতে শুয়ে আছে পাখি

২১.

যেহেতু তুমুল ঝড়ে তুমি আসতে পেরেছিলে
যেহেতু আমাদের এখনও কিছু অকারণ হাসি প্রয়োজন
অনেকদিন যাদের কোনো খবর পাইনি আমি
অথচ ভিতর থেকে আমি ডাকছি
গথিক বাড়ির অন্দর থেকে
ছড়িয়ে পড়ছে বিয়ের মন্ত্রের মতো রোমাঞ্চ
অথচ এই সাতরঙ রাত্রির কেউ নেই;
ভাবি আঙুল বোলালেই বেরিয়ে আসবে ম্যাজিকের খরগোশ
সারারাত বৃষ্টি হবে, আমরা দেখব
নাইটি ভিজে গেলেও তুমি পরোয়া করবে না ...
এখনও ছায়ামোহর দীঘি দেখলেই যেহেতু স্নানে নামো
যেহেতু এমন কবিতা ভালো, আপন কিছু তো চায় লোক!
ফিরছো কখন?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অনুবাদ - Gloomy Sunday (আত্মহত্যার গান)

অনুকবিতা

অনুবাদঃ “আফরি” –“ the most beautiful one!”