খেয়ালী লেখা (৭০টি)


{১}
রাত্রি তার নিয়ম মাফিক দিনে গিয়ে পড়ল। সন্ন্যাসী আবার ব্যবসায় নেমে পড়ল।

{২}
অবাধ্য নিজের ধোঁয়ায় পালিয়ে এলি মৌয়াল

{৩}
বৃষ্টি বুঝিনি, সে সবার ঘুমে ঝরে গেছে
তার প্রতি মায়ায় আজ সকালে সব মুখ সুন্দর...

{৪}
নক্ষত্রে নক্ষত্র জেগে রয়
রাত্রি গভীর
আর আমরা ভাবি সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে...

{৫}
এখন প্রান্ত বদল হোল শুধু
খেলা বাকী
খেলা বড় নির্মম শোনালে, ছবি?
বিরতীর পর শেষ দৃশ্য রয়ে গেছে
অথবা নির্মম শেষ বাঁশি

{৬}
রাত্রি কালোর প্রান্তরে
অনন্ত তার রূপ ধরে
বিজন বেলা এক হয়ে
সমগ্রতার মুখ ছুঁয়ে
আলোকপাতে চোখ ভরে
রাত্রি কালোর প্রান্তরে

{৭}
আমার হোক অধীর চোখ
ঝাউ পাতাদের বর্ষালোক

{৮}
দূরে পাখির ঝর্না না তার প্রিয় ওড়না?

{৯}
বর্ণপরাগে শব্দফুল বৃথা
কবিতা বলেছি তারে, শব্দে লিখি নি যারে

{১০}
আমাদের মত লুট করেনি কেউ নদী
ভোর বৃক্ষ পাখি
নিখুঁত এ স্বরচিত জেল জীবন

{১১}
সবার বুকেই আছে এক কথা বলা পাখি
পৃথিবীর ঠোকর থেকে বেঁচে যেতে
আমরা যে বর্ম আঁটি
তার নাম পৌরুষ
উদ্ধত যাপন
তবু সবার বুকেই থাকে সুনীল সে পাখি
আমরা সবাই শুধু বুকে চেপে রাখি...

{১২}
তোমার চোখ থেকে ভোর ঝরে পড়লেই জাগবো...

{১৩}
মেঘলার জোড় কাটে প্রতিবন্ধী ঝড়
ছিন্ন করে সব, বলে
মায়ামুক্ত হও
মেঘশূন্য হও
আর আমি উৎকট আলো দেখি
চলে যাবার সময় এখন, আকাশলীনা

{১৪}
হলুদ ফুল প্রেইরি
তোমাকে বলি
বিকেল তোমার স্বর্ণপুষ্প প্রেম
এই আলোতে শুয়ে পড়ে দেখো
হরিণআলো আকাশে কার
ভ্রুজোড়া বলাকার পাখা...

{১৫}
চোখের নিমিষে ভোর হয়ে যাওয়া রাত
অগুনিত নয়
এই আঙ্গুল গুনেই বলা যায়

{১৬}
কিশোর দু’চোখ নির্নিমেষ
পিংক সাইকেল পথের শেষ

{১৭}
ছুরি দিয়ে কাটা আপেল শৌখিনদের জন্যে

{১৮}
ব্ল্যাকআউটেও খুঁজে নেবো তুই দীপ্ত এমন

{১৯}
নৌকো গলুই থেকে সরে যাবে রোদ
জলের আলাপ আছে ছায়ায় মধুর,
এইটুকু পর হবে বাড়ির নোঙর-
ছিমছাম আশ্রম ঘুমঘুড়ি দোল।
আমাদের বাড়ি জানো শীতল মাদুর
পাখির পশমে মাখা ভোরআলো বোল।

{২০}
সন্ধ্যা তাহার নাম
সন্ধ্যার মত কে আছে?
রাত্রির মত কী আছে !

{২১}
মুগ্ধতার নাম যতি

{২২}
পেছনে হাঁটার পথ বরষা বিজন
পেছনে হাঁটার পথ নদীয়ার নীল
অন্ধের চলাচল চলেছে যে জন
তার কাছে ছুটে আসে শিশুর মিছিল

{২৩}
কবিতার কেমো দিয়ে সারবে কি?
- জীবন এক বাড়ন্ত ভুল

{২৪}
মেঘ হবো, মৌনি ময়ূর
দেখে নেবো নাচের নিয়ম

{২৫}
শাল মহুয়ার বন
রাতের নির্জন
কবিতা পড়ার প্রহর
... আর এ সমস্ত বেরসিক দিন

{২৬}
তোমার নৌকো মাঝি নদীতে ভাসাও
দেখ, ঘোলা জলে জলে ওঠে নকশির ঢেউ
তোমার কণ্ঠে তোল সাঁতারের সুর
স্নানকন্যা সহ ভেসে যাক গোলাপকলস
সমস্ত দুপুর আর বিকেলের স্নান, জল আনা ছল
এইবার জানো।

{২৭}
আলো যখন লেখার আড়াল
জ্যোৎস্না এসে পড়ে
...... অক্ষরে অক্ষরে
রাতবিরেতে পদ্য আসে
নিস্প্রদীপের ঘরে

{২৮}
পাথর সময়,
বদ্রীর বুক জুড়ে স্বরলিপি জমা;
সম্মতিই সঙ্গীত-
দিয়ে দেখ।

{২৯}
বিকেল সঠিক সময় নয়
কালবোশেখির দিন

{৩০}
বিড়বিড় করে কথা বলে কেউ
আত্মকথন, খ্যাপাটে চোখ
ভয়ে ভয়ে কাছে যাই, শুনি,-
গ্রহণ করেছো যত, ঋণী তত করেছো আমায়...

{৩১}
চিহ্ন আছে আকাশে আকাশ,
জলহাওয়া খবরাখবর।
অক্ষরের সুতো ছাড়ো
হৃদির নাটাই -
বিজলীর ঘর উড়ে যাও...
অনেক উড়ান পরে
এই বুকে গুটিয়ে নেব মেঘার কাজল।

{৩২}
চৈত্রী তোমার আলোতে দেশান্তরি হব
তুমি সাক্ষী থেকো পথভোলা রেশমী
ভুল। তোমাকে আপন করে চলে যাব
চিত্রা চিহ্নের দিকে; নিদমহলে যখন
নেমে আসা তারা......

{৩৩}
ফিরে দেখার চোখে ছানি
সেখানে অসুখ হয়েছে
আলো রাত্র হয়েছে।

{৩৪}
পথ হারানোই ভালো
পথ হারালে চেনা থেকে দূর
রুদ্রপলাশ বন,
রঙ মশালের আলো।
পথ হারানোই ভালো,
অনুগামীর লক্ষ্য তবে হব
পথ হারিয়ে অজানার চিহ্ন হয়ে রব।

{৩৫}
হায় অলীক মৌন ট্রেন
ঘুমুতে দিলে নিরুত্তাপ
জাগরণে স্বস্তি দিলে না

{৩৬}
হায় আমারও দেখা নাই
রাত্রিলগ্ন দৃষ্টি,
একটি নীল শিমফুল...
শিশির সেখানে বসে
জোনাকির আলো পড়ে
ফুলটির চোখ হয়ে যায়।
হায় বর্ণময়, ক্ষমা কর
তোমার নিক্ষিপ্ত চ্ছটায়
ফেরাও.........

{৩৭}
যখন আজ খুব ভোরে উড়ে এলো, করতলে শস্যকণায় ঠোঁট দিলো পায়রার শিশু। আমার নিজস্ব ভোর চুমুক দিয়ে শুষে নিয়ে শান্ত হল এত এত রাতের আঁধার। আমি, এই ওয়াইন হাউজ আর এই ভোর একা ছিলাম। পুরোনো আঙ্গুরমদ কাঠ পিঁপে পড়ে ছিলো অনেক বছর। সময়ের দাগ ধরে গিয়েছিলো ওপরে ওপরে, ভেতরের স্বাদ ঘন তার। এবার চুমুক দেবো। শান্ত হবো। যখন তুমিই এলে পায়রার শিশু...

{৩৮}
ডাকনামে একবার ডেকে দেখ,
প্রতিধ্বনিতে বুঝে নাও অলঙ্ঘ্য পাহাড়
শূন্যতা...

{৩৯}
পুকুর ধারে হাস্নাহেনা
হাস্নাহেনার মুখ
অজানা অসুখ

{৪০}
পার্সি হারেম থেকে নেচে এলো বেলি ড্যান্সার
শত হ্যামিলন উপাখ্যান তার পিছু পিছু
আসলে আমি তুমি সবাই পতিত হতে চাই মৃত্যুবিহীন
পাপচিহ্নবিহীন ...

{৪১}
বালির লিখনে গায়ত্রী উচ্চারণ
বরণীয় তেজ, ধীশক্তির অনুনয়
প্রাত্যহিক ঢেউয়ে মুছে যায় বলে
শুধু মন্ত্রমানব হয়ে থাকি

{৪২}
যেই পথে নদী চলে সেটাইতো নদী। তার কোনো ভুল পথ নেই।

{৪৩}
বিবশ বনান্তে ঘর
সেখানে বিজয়ার মত জয়
তার মত মন কেমন
এই পদ্যঘরের বারান্দায়
সুগন্ধ হিম হয়ে থাকে
ঘূর্ণি মেঘের ছাদ তার
ঘুলঘুলি ফুঁড়ে তার আলোজাল
এই পদ্যঘরের বারান্দার কোনে
রক্ত ত্রিশূল

{৪৪}
যত নিশ্বাস কাটিয়েছিলাম বেলীফুলটির সাথে জীবনের যোগফল তা

{৪৫}
আমিও পাঠাতে চাই বিলুপ্ত টেলিগ্রাম-
'কামিং সুন'...

{৪৬}
রাত্রির কাছ থেকে
চেয়ে নিতেই সে দিয়ে দিল একটি তারা
আমি তাকে ভাঁজ করে রেখে দিয়েছি বুকে
আলো কত নিঃসঙ্গ হতে পারে জানো না

{৪৭}
কফি-কাপ, ধোঁয়া ধোঁয়া নেশার ক্যাফেইন
তবু কফি নয় কাপে নেশা
ছুঁয়ে দেখা তার কার্ভি হাতল বছরে বছর...

{৪৮}
তুমি হেঁটে যাচ্ছো
আর দেখছি ব্লু লাইলাক বনটি কেমন ক্রমশ শাদায় লীন হয়ে যাচ্ছে
ধীরে-----------------------------

{৪৯}
ইট-পাথর
চৈত্র দিন
ডাকছে আজ

রাধা-শ্যাম
মার্মা গ্রাম
ঝুমরি নাচ

ইট-পাথর
চৈত্র দিন
নেই আদর

বৃষ্টি হোক
ঝড় উঠুক
বেরিয়ে পড়

{৫০}
এইসব অরফান শব্দরা টলমল পায় হেঁটে যাবে সাঁওতালি গ্রাম
বৃক্ষ তাদের কোলে তুলে নিয়ে জ্যোৎস্না দেখাবে
তারপর তারা হবে ফুলশিশু
কবিতাবাড়িতে হবে জন্মোৎসব

{৫১}
মরু বন্দনায় এসো প্রার্থনার ওয়েসিস

{৫২}
পুরোনো দেয়াল ঘড়ি থেকে
তুলে আনবো ভেবেছিলাম হলদে সময় -
তার পেন্ডুলামে না না
ধীর প্রতিবাদ;
সব কিছু জেনে গেলে
যদি আমি তার দিকে আর না তাকাই!

{৫৩}
আহুতি আগুন, রাত্রির মুখোমুখি মুখ
তার চোখের কুঁড়িটি ভাবে বর্ণের রাত;
রাত্রিপ্রিয়া, তুমি বহিরঙ্গে দেখেছিলে সুখ
বোঝনাই পুড়ে যায় এই হাত ছেড়ে গেলে হাত

{৫৪}
বৃষ্টি তাই চোখের ক্যামোফ্লেজ
কেউ কেউ বর্ষাতি ছাড়া
পুরনো রাস্তায়...

{৫৫}
মাতাল বেলীর চোখে না বসে যতটুকু দূর রেখে প্রজাপতি ঝিম উড়ে থাকে ওখানেই প্রেম

{৫৬}
চুপ করে থাকে একটি তিতির রাতি
চুপ করে থাকে নূপুর নাচের বেলা
কথা শত যত বলেছিলো সন্ধ্যারা
ওদের নিয়েই এমন মৌন মেলা

{৫৭}
ঝড় যতটুকু ওঠে
জানালার কোণে দেখা
ঝড় কতটুকু ওঠে
অদেখা... অদেখা

{৫৮}
ক্রমশ বৃষ্টির ঝুমঝুমি বাজিয়ে চলে গেছে অবসন্ন মেরুন ট্রেন
'ঘ' - বগিতে বরযাত্রী
স্টেশন মাস্টারের মেয়ে...

{৫৯}
অবচেতনে সজল মিশে থাকো
বৃষ্টি বেহাগ রাতে,
চিন্ময়ী বান্ধবী।

{৬০}
চিত্রগুপ্ত বেকার হয়ে যাক
এই অস্থির অসহ্য খেয়াল
ডিসমিস করে দাও ভগবান
যতসব নিয়ম ভেঙ্গে
একজন রাখাল অথবা কবিকে
দিয়ে দাও যথার্থ সাম্যবাদের মন্ত্র,
অমরত্বের বাঁশি
সে কিছুদিন দেখুক, হে সর্বদ্রষ্টা!

{৬১}
পুরনো আলপনার দিকে তাকালে মনে হয়, পুরনো হলেও তার উপলক্ষের আনন্দ যতদিন যায় তত প্রিয় হতে থাকে।

{৬২}
কেউ চোখ মুছে রাখে
ঐ দূর বিকেলের বাঁকে
কাজল রেখাটি যেন থাকে

{৬৩}
একটা নির্বিবাদ ঝড় হোক
সিল্ক স্কার্ফ ঘুড়ি হোক
এই চোখে ফিরে তো আসুক
কিশোরবিস্ময়
-----আবার

{৬৪}
নিদ্রা ফুলের কুঁড়ি,
স্বপ্ন – শিমুল;
ঘুম নাই যার চোখে
তার পুরো বন।
আমি আর জাগি নাই
কুয়াশার ঘোর
কুয়াশার ঘোর শুধু
কার বাড়ি যাই?
নীলার ছবিটি আছে,
নীলা মনে নাই।

{৬৫}
হরিণগোধূলি শেষ,
একটা কবিতা শেষের মত ইউফরিক সন্ধ্যা এখন।

{৬৬}
চুপচাপ দেখো তুমি
মুখর সেদিন হবে
প্যাস্টেলে আঁকা যত পাখি
আলো থেকে সরে যাবে দাহ
অশ্বত্থ পাতা থেকে
অঝোর বরষা পর
টিপ টিপ শব্দ’রা
জীবনের কালো পিচে
শীতলতা সহ মিশে যাবে

মৌন যেদিন তুমি
অজস্র বুকের কথায়।

{৬৭}
আস্তিনে লুকিয়ে রেখে ট্রাম্পকার্ড
বিমর্ষ চোখ...
খেলায় চলে এসব
প্রিয়তম বন্ধুর সাথে চলে তুড়ুকের চাল
জয় কেমন উষ্ণ হয়ে আসে অবাক আবীরে
সমুদ্রজল জানে সূর্য ডুবিয়ে

{৬৮}
পাখি নও, সীমান্তে বিদায় জানাতে এসো না

{৬৯}
ঐ সুদূরে সুদূরে আছে
মৌবেদনা
বিশাখা জানে না

{৭০}
এখন সময় একটি প্রবাহ - নীমতলী শ্মশান ঘাটের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ক্লেদ নদী; এক্ষুণি আকাশ থেকে লৌকিক ফিনাইল বৃষ্টি হলে আয়নায় আমাদের মুখ দেখে কেঁপে উঠবে শিশু মাইশা, শয়তান, ভগবান...

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অনুবাদ - Gloomy Sunday (আত্মহত্যার গান)

অনুকবিতা

অনুবাদঃ “আফরি” –“ the most beautiful one!”