খেয়ালী লেখারা...

{১}
কাঠদস্যু হানা দিয়েছিলো চন্দন বনে
লুটেরা কুড়োল ঝুলিয়ে রেখেছিলো তারপর রাত্তিরে ডেরায় ফিরে
... সুঘ্রাণে সুঘ্রাণে তার আজ অনিদ্রা রোগ

{২}
দোলনায় দোল দেখে দেখে কিশোর ছন্দ শিখেছে

{৩}
পুষ্প অধীর দেখে,
কার হাসি থেকে প্রজাপতি উড়ে উড়ে যায়
হাসিন পাখায়

{৪}
দক্ষরেখায়
আটকে আছে
কে কে?

{৫}
এবার সব কৃষ্ণপক্ষের কালো তুলে নিতে পারি
দাহকাল অচেনা সময় নয়, এবারও বুকের দাহ
দুর্বহ নয়; এবারও ভবিষ্যত বলে দিতে পারি,
-- মনপুরা দীঘিতে ডুব দিয়ে পারঙ্গম শ্বাসে
তুলে আনব মোহর কলস; অগ্নিযুদ্ধে আমি সেই
রূপকলসে নেব জল। মোহর তোমার।

{৬}
তাপমাত্রা বাড়ছে
ফ্যান, এসি পুরোদমে এবার
হাতে বোনা হাফ সোয়েটার
তুলে রাখি
তুলে রাখি আঙুলের কারুকাজ
কাছের অভয়,
গ্রীষ্ম অসহ্য সময়।

{৭}
কী ভেবে যেন, ঠোঁট ছুঁইয়ে একবার নক্ষত্রে উড়িয়ে দিয়েছিলাম রুপোলি কাগজের প্লেন !

{৮}
আজ এই সবুজতম বৃক্ষ হোল তোর ঘুমের আশ্রয় হিরন্ময় পাখি
...... শ্রাবণ নিবিড় ছিলো

{৯}
আর এইসব সুচরিত বসন্তদিনও একদিন বর্ষামুখর হবে, জানি

{১০}
একটা আলোচিল পথ ভুলে গেছে
তার পিছে উড়ে উড়ে দিন হারিয়েছে

{১১}
দিন যায় দিন মুছে যায়
আমরা চেপেছি শেষ সন্ধ্যার ট্রেন
দেন-দরবার, গল্পকথা, প্রাপ্তি-
অপ্রাপ্তি সব স্থির বসে আছে
টেলিফোন তিন তারে বসা
দোয়েলের চুপ শরীরে;
অন্ধকার হবার আগে
চোখে জমিয়ে নেই পাখির পালক
বহুভংগীর চুপ চুপ শাদা-কালো’র প্রহর

{১২}
রূপকথার দেশ বাদামী টয় ট্রেন; পাহাড়ের নাম সবুজমেঘ
পাখির নাম মুক্তাচোখি, পথের নাম কাশপথ।
পাহাড় দেশের নূপুর নূপুর গাড়ি তার পায়রা জানালায়
ঘুমমেঘ ভোরকুয়াশা। জানালায় মুখ বাড়ালে
আলো হরিণসোনা, ভুলভাঙা ভোর
আর বাৎসল্যের ফুলঝুড়ি
পুনর্বার বার বার মুখরিতার মুখ

{১৩}
দিগন্তরেখা থেকে আকাশে হীরক জ্বেলে মরে গেল লক্ষ আতশ। আমি এক অতি দীর্ঘ ময়দানের মাঝখানে একলা দাঁড়াই। আলোর ঝলকে সুতীব্র নীল হয়ে আসে আকাশের মুখ। খানিক পরের অদৃশ্য হবার শোকে যেন সে গহন ব্যথায় নীল। অদৃশ্য হতে যার আপত্তি আকাশ তারি নাম। আমার নাম আকাশ নয়। ময়দানের সুরেলা বাতাসে আমি দৃশ্যমান, দৃশ্যমান ঘাসে আর পায়ের ছাপে ছাপে। ময়দানের একধারে পুরোনো জমিদার বাড়ি- কী এক করুণার মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! আমি আছি একটি বিধ্বস্ত খেজুর গাছের নীচে। দুই দিক কাটা কাটা গাছ। মধুরস বয় বলে বড় কষ্টও বয়। আমি তারই নীচে দাঁড়িয়ে দেখতে পাই আকাশে মনুষ্য দীপালি। আজ কার বিজয় হোল, নাকি পরিণয়, ধর্ম উৎসব কোনো...? ক্ষণিক দীপালি জ্বেলে মরে গেল লক্ষ আতশ। আকাশের নীল তাই ব্যথায় সুনীল। আমি আমার ডাকনাম ভুলে গেছি...

{১৪}
চোখ দর্শন মন দর্শন মিললে বাঁধন হবে
তবু চোখের দেখার পাগলামী ছেড়েছে কে, কবে?

{১৫}
সমুদ্র জমিয়ে রাখে
কত শত দুপুরের স্নান
অনুনয়ে চোখে রাখে
ধীর নদীর অভিমান

{১৬}
রঙ জমিয়ে এসো শব্দমেঘের দল
এই মৃত আকাশের খোলা চোখ
বন্ধ করে দিতে অথবা প্রাণ এনে
দিতে তাতে বুকে ধোরো এক নদী
জল, সজল হোক মন-কবিতানগর

{১৭}
আশৈশব হাঁটছি, দৌড়ুচ্ছি, পড়ে যাচ্ছি
আবার উঠে পড়ে বাটারফ্লাই স্ট্রোকে পেছনে
ঠেলে দিচ্ছি বুড়িগঙ্গার কোলেস্টরেল, এগিয়ে যাচ্ছি
পেছনে মিলিয়ে যাচ্ছে কায়দার ল্যান্ডস্কেপ, প্লাস্টিক শহর
এগিয়ে আসছে অব্যর্থ ডাকের কার্নিভোরাস বাগান

{১৮}
কিশোর এক সন্ধ্যা নদীর তীরে উদাসী হওয়ার সুর সেধে সেধে ঘুমিয়ে গেছে

{১৯}
মুহূর্তগুলো
এলোমেলো ছিলো দিক ভুলে,
আজ এক হয়ে ঝিলমিল
তোর নাকফুলে।

{২০}
এখন ফসলের মাঠ ধুধু, ফসল চিহ্নবিহীন। বাগান তবু ফুলরঙমাতাল। প্রকৃতিও সংসারের কাজ ছেড়েছে। বাসন্তী হয়েছে।

{২১}
রূপান্তর শেখো
সন্ধ্যার কাছে এসো,
ইতিহাস পাতার ভয়ংকর সব আততায়ীর মত
তারপর অদৃশ্য হয়ে যেও
রক্তাক্ষর দেখে মানুষ বলুক,
‘কবিতা... কবিতা’

{২২}
জুড়তে জুড়তে অন্ধ হয়ে গেছে রূপপুরের ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি।

{২৩}
রাত্রি তোর চুলের ফিতেয় অঙ্গ বেঁধে রাখি, রুখে দেই চন্দ্রছোবল।

{২৪}
কিশোরের পাহাড় ভ্রমণকবিতা এমনইতো, পিচ্ছিল সর্পিল পথের শেষে সোহিনীর ডাক। হরিৎ আলোর ঘর পাহাড় চূড়ায় দেখে দেখে কিশোরের নিশিপাওয়া সবুজমাতাল চোখে শোভনসন্ধ্যা বসে যাওয়ার রাইম। ইশারা সমেত সোহিনীর হারিয়ে যাবার ছন্দ।

{২৫}
ক্রসিং ছিলো দুই ট্রেনে
একটা ভ্রমণ জমে আছে অল্প একটা স্থির ক্ষণে
লালমাই স্টেশনে

{২৬}
একটা পথের আজ নিলামের ডাক। ঝড়ের পাতারা সব শ্বেতপাথরের দোয়েল হয়ে তার বাঁকে মুগ্ধমুখ। একটা পথের পলিতে গাভীর চোখের জল, ধুলো মিশে তার সাথে প্রতিমার মাটি। পথের হাওয়ায় ওড়ে সুমাত্রা ল্যাভেন্ডার, বনমৌরির ঘ্রাণ। তার দুইধারে কৃষ্ণকালো ফুল, নাম না জানা ফুল। একটা পথের শয্যায় শিশিরের ঘুম, হরিতকি-বয়ড়া ফল, যষ্টিমধু। একটা পথের আজ নিলামের ডাক। সেই পথ আমার ঘর ছিল। আমি চরম অসভ্যতায় তাকে নিলামে তুলেছি।

{২৭}
প্রতিদিন নিয়ম করে রেডিওর নব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ভিনদেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস শুনি। হাওয়ার গতিবেগ, তাপমাত্রা, ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা, দিন-রাতের পরিধি... এইসব। ছেলেবেলাতেই পড়া ছিল, আবহাওয়ার সাথে মনের সম্পর্ক আছে।

{২৮}
সেই হেমন্ত বিকেলের আলো নিজে নিজে
ছাপ রেখে চলে গেছে আড়িয়ালখাঁর কাঠব্রীজে।

{২৯}
ঘোলা চোখে ঠিকরে ওঠে রোদের চিবুক
ভ্রু-পল্লব অরণ্যে উড়ানের ঘ্রাণ রেখে যায়
হরিদ্রানগরের ঝাঁক ঝাঁক সবুজ বাবুই
তিলচিহ্নে জড়ো করো জীবনানন্দের সকল নক্ষত্র...
......করাতের সিম্ফনি শুনি, মৌ
মাতাল মিথ্যে বলে না...

{৩০}
পুষ্প বিমর্ষ কিনা বোঝা দায়। সে যখন বিমর্ষ হয় তখন তার মরে যাবার সময়। ওটা মন খারাপ কিছু নয়, শেষ যাত্রার চিহ্ন। মনে রেখো, কোনো কোনো কবিরও আছে পুষ্পধর্ম।

{৩১}
দূর আমাজানের পথে বরষার ধারা
এইখানে সাহারার পথ, হারানো অর্কিড
আচমকা মুখ ফিরে চাও
বৃষ্টি দেখি

{৩২}
শিমুল আমার শিমুল বন্ধু ভালো
মুগ্ধরঙ পুষ্প বৃক্ষ ঋষি,
সেলুলোজে বন্ধুত্ব কোমল নিবিড় তোমার
ব্যথা জানো না বন্ধু
উষ্ণতা জানো...
নিদ্রা দিতে জানো

{৩৩}
কার হস্তরেখায় জেগে উঠছে অরুণলেখা, আমার জাজ্বল্যমান
বর্তমান!

{৩৪}
সন্তর্পণে নিভে গেছে আলো। উনুনে হরিমতি রাতের রান্না চাপায়। পাটখড়ি পুড়ে যাচ্ছে দ্রুত। ছড়িয়ে যাচ্ছে অঙ্গার হাওয়ার তোড়। দূরে বসে রামকানাই। তার চোখে পুরো দৃশ্যটা অসাবধানী আলোর মত খেলে যাচ্ছে...

{৩৫}
করবি স্নান?
করবি পান?
মরীচিকা, মরূদ্যান
জানরে প্রাণ

{৩৬}
ফুটেছিল ব্যালকনিতে অচেনা রোদ্দুরে
সমস্ত দিন পরে ফুল ঘুমিয়ে পড়ে

{৩৭}
বন বলতেই গদ্যসুন্দর ঋজু অরণ্যবিন্যাস আর
পার্ক মানেই কি হারানো দিনের কবিতা?
সিমেন্ট বেঞ্চিতে ঘাড় বাঁকানো চড়ুই
বাদামের খোসা, সিগারেট ফিল্টার
বেলীর ঝাড়ের ধারে উচ্ছিষ্ট,
ক্লোরোফিলে রোদ সঞ্চয়
বাতাসে পাল্টে যাওয়া যাবতীয় রঙ,
তার বহুবিধ শেড, গন্ধরাজের অংকুরপাতায়
শিশির প্রিজম, তার গোড়ালিতে খোলা
কনডমের প্যাকেট...

এ মুহূর্তে পার্কে ঢুকছে দু'জোড়া মুগ্ধ চোখ

{৩৮}
মুক্তি দিলেনা
প্রাণে বন্দিনী

{৩৯}
বিউটিপার্লার এর নাম দিলাম রূপঘর
- কবিতারা সাজকথা

{৪০}
আমার ডায়েরিতে বৃক্ষের কাছ থেকে চেয়ে নেব জীবনের শেষ অটোগ্রাফ
...... কবিতা মানেই নিজের সাথে কথা

{৪১}
যুগলসাঁতারে ঐ পাড়ে যাচ্ছি
দৈর্ঘ পরিমাপ সর্বদা বিভ্রান্তিকর

স্থলচারীতা অসহ্য

{৪২}
এই বেলা
তীব্র ছুটে যাচ্ছে আলোর চিতা
এই আলো আলো সোনার কাছে সঙ্ঘচারী শীত
এই বেলা
ওষ্ঠ বিবশ করা চাঁপাগন্ধ মদ মৌতাত
আমি চুর
... যদিও দুপুর

{৪৩}
একলা সরল আলো-মন,
না জেনে পেরোল কার মনের প্রিজম

{৪৪}
এইসব সময়ের জানা নাই কিছু
তার কিছু জানা নাই কোথায় হারালো
কাঁচপোকা ঝিলমিল পাখনাটা তার
- কপালে জ্বলেছে কার
নিভছে ভীষণ

দেখা নাই তার - বিনতা আপেলগাছ,
হরিতাভ মেঘের আদল;
কার হাতে লিপিকলা,
ঝর্নাধারার অক্ষর...

ধাত্রীবিদ্যা আজ অবিশ্রুত নাম

{৪৫}
নীল দরিয়া ছেড়ে দিল -
দেখি সারেং কেমন মুক্তি পাস

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অনুবাদ - Gloomy Sunday (আত্মহত্যার গান)

অনুকবিতা

অনুবাদঃ “আফরি” –“ the most beautiful one!”